• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌ রুটে ৫ বছরে মৃত্যু ২২, কারো শাস্তি হয়নি

    চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে পাঁচ বছরে বাইশ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু কোনো কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। কারো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে মৃত্যুর পর কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। নিহতদের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। হাইকোর্ট ১৮ জনের মৃত্যুর জন্য বিআইডব্লিউটিসি ও জেলা পরিষদকে দায়ী করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও আইনগত ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। দায়ী কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব নয় বলে মৃত্যু এখানেই থেমে নেই। ২০১৭ সালে ১৮ জন মারা যাওয়ার পর গত বুধবার কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে চার শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এক পরিবারের তিন বোন রয়েছে।

    সন্দ্বীপ নৌঘাঁটিতে তদন্ত কমিটির কোনো সুপারিশ কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন সরকারি সংস্থা নৌ ঘাঁটির দায়িত্বে রয়েছে। প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। কে কী লঙ্ঘন করেছে তা প্রমাণ করা প্রায়ই কঠিন। তারপরও তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের সুযোগ কারো নেই।কোন কমিটির সুপারিশ কী ছিল এবং কেন তা বাস্তবায়ন হয়নি তা খতিয়ে দেখব।

    চালকের গাফিলতির কারণে গত বুধবার স্পিডবোট দুর্ঘটনায় চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এবারও তদন্ত কমিটি হয়েছে। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা গঠন করেছেন। তিনি বলেন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অতীতে তেমন কিছু না হলেও এবার কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    তদন্ত কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও কারও শাস্তি হয়নি: ১৮ জনের মৃত্যুর পর ২০১৭ সালে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিআইডব্লিউটিসি একটি কমিটি এবং জেলা প্রশাসক আরেকটি কমিটি গঠন করেন। দায়ী ব্যক্তি শনাক্তকরণে দুটি কমিটি ভিন্ন হলেও চারটি বিষয়ে একই ধরনের সুপারিশ করেছে। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদ বলেন, চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথকে নিরাপদ করতে হলে অননুমোদিত ও অনিরাপদ নৌ চলাচল বন্ধ করতে হবে। পণ্যবাহী জাহাজে অবৈধ যাত্রী পরিবহন বন্ধ এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এসব সুপারিশের কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি দায়িত্বশীল সরকারি সংস্থা জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিসি।

    তিন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দূর হয়নি : ঘাট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সরকারি তিনটি সংস্থা- বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে যাত্রীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন। রুট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সত্ত্বেও এ রুটে সেবার মান উন্নয়নে নজর দেয়নি সরকারি তিনটি সংস্থা। উল্টো আরও খারাপ হয়েছে।

    প্রতিটি তদন্ত কমিটি নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে এসব তদারকি করতে বলে। অথচ গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে মাত্র তিনবার!

    সন্দ্বীপে নিরাপদ যাতায়াতের আন্দোলনে থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক সন্দ্বীপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম বলেন, “রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে যাদের এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করার কথা তারা উদাসীন। যাত্রীরা কিছুটা হলেও সুরক্ষা পেত। অবৈধ নৌ-যান চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান চালালে।

    মন্তব্য করুন