চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জলাবদ্ধ।তিন জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকার বেশি
টানা বন্যার পানিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের ১৫টি উপজেলায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। হাজার হাজার পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। বনের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। ক্ষতির এই তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীও। জলাবদ্ধ নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ড্রেন ও প্রায় ২ কিলোমিটার ফুটপাথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, শুধু নগরীর রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাথ সংস্কারে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতার কারণে এই তিন জেলায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় গরিব মানুষ আছে। ত্রাণ তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। সড়ক-মহাসড়ক, ফসলি জমি বা ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির একটি ধারণা তৈরি হয়। চূড়ান্ত হিসাব পেতে আরও কিছু সময় লাগবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বন্যায় চট্টগ্রাম জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রাথমিক তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। এ ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, বন্যায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাতকানিয়ায় ছয়জন, লোহাগাড়ায় চারজন, চন্দনাইশে দুইজন, রাউজানে একজন, বাঁশখালীতে একজন ও চট্টগ্রাম নগরীতে একজন মারা গেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে ৬০ হাজার ৮০১ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এসব জমিতে আমন ও আউশের পাশাপাশি বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলের চাষ হতো। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বান্দরবানে ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রাঙামাটিতে ৫৯৩ হেক্টর ও খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ১৫ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষেধাজ্ঞার পানি পুরোপুরি নামেনি। অনেক উপজেলায় যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে আমরা অনুমান করছি, তিন জেলায় ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
ভূমিধস ও বন্যায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ সেকশনে অন্তত ১০ কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে রেললাইনের বিভিন্ন অংশ থেকে পাথর সরে যাওয়ায় ভূমিধসের কারণে লাইন বাঁকা হয়ে গেছে।
প্রকল্প পরিচালক. মফিজুর রহমান বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো রেললাইন হিসেবে আনলে এর পরিমাণ বাড়বে।
পার্বত্য জেলায় ৩৫৭টি স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০০ গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৬১৭ পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এতে ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ৬ হাজার ৫১৪টি ঘরবাড়ি, ৩৬টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১৮টি বাজার, ২৪টি বিদ্যুতের খুঁটি ও ১৫০টি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে।
কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু কক্সবাজারেই ২০ থেকে ৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে এ সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘর। চকরিয়ায় সুরাজপুর-মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী, চিরিঙ্গা, খুটাখালী কাকারা, লক্ষণচর, বড়ইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা এলাকার মাছের ঘের ও পুকুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার শীলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব পাব।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ যানবাহনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চন্দনাইশে এর বিস্তৃতি ৩০ কিমি। বন্যার পানিতে এ উপজেলার দুই পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ জুনায়েদ আবছার চৌধুরী জানান, এলজিইডির অধীনে চন্দনাইশে ৪০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে।