চট্টগ্রামে শিক্ষকদের ভুলে শিক্ষার্থীদের আনন্দ জলে।শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জ করলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলছে
মেধাবী ছাত্রী কানিজ ফাতেমা পিএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এসএসসিতেও সে জিপিএ ৫ পাবে। কিন্তু ফল হাতে পাওয়ার পর একটা বিষয়ে ব্যর্থ। চোখ কপালে উঠে গেল। অভিভাবকরাও হতবাক। কানিজ কোনোভাবেই ফল মেনে নিতে পারেনি। পরে বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে ফলাফল পুনঃমূল্যায়নের জন্য আবেদন করে কাঙ্খিত জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু ফলাফলের দিন যারা ভোগান্তিতে পড়েছেন তাদের কি হবে? কানিজের বাবা-মাও সুখ থেকে বঞ্চিত।
শুধু কানিজ ফাতেমা নন, চট্টগ্রামে শিক্ষা বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। খাতা চ্যালেঞ্জ করে গত পাঁচ বছরে রেকর্ড ১,৭৪৪ শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে। একই সময়ে অকৃতকার্য থেকে ২১১ জন পাস করেছে এবং ১০৩ জন অকৃতকার্য থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
শিক্ষকদের ভুলে ‘জলেযাচ্ছে আনন্দ উপভোগ। এজন্য বোর্ডের পাশাপাশি শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, অজ্ঞতা, উদাসীনতা ও অদক্ষতাকে দায়ী করছেন কয়েকজন শিক্ষক। তাদের মতে, কোনো কোনো শিক্ষক ভুল করে ‘৯’-এর পরিবর্তে ‘০’ দিচ্ছেন। আরেকজন শিক্ষক ৪৯ এর পরিবর্তে ০৯ দিয়েছেন। শিক্ষকদের এত বড় ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সদস্যরাও বিব্রত।
পুনঃনিরীক্ষণের ফলে, গত বছর ৪৫ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য থেকে পাস করেছে, ২৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফলাফল পরিবর্তিত হয়েছে ১৮২ জনের। কাঙ্খিত ফলাফল না পাওয়ায় উত্তরপত্র পুনঃচেক করার জন্য আবেদন করেছেন ১৪ হাজার ৫২৫ জন পরীক্ষার্থী।
২০২১ সালে, ২৭ জন পরীক্ষার্থী পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ৫৯ জন তাদের ফলাফল পরিবর্তন করেছে। আবারও জিপিএ ৫ পেয়েছে ছয়জন। উত্তরপত্রের ফলাফল ১৪১ পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২০ সালে রেকর্ড ৬০৯ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তিত হয়েছে, একজন শিক্ষার্থী ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। ৪১ পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও নথিপত্র ভালোভাবে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের চরম উদাসীনতা, অজ্ঞতা, দায়িত্বহীনতা ও অদক্ষতার প্রমাণ পাচ্ছি। দেখা যাচ্ছে সাতের জায়গায় শূন্য ভুলে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও যোগ-বিয়োগের ভুল করছেন। কয়েকজন শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত।
একজন শিক্ষাবিদ ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, কিছু শিক্ষক তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। স্বেচ্ছায় অ্যাকাউন্টটি অন্য ব্যক্তিকে দেখান। কিন্তু প্রতিটি অ্যাকাউন্ট দেখার জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়। ভুল শিক্ষকদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বোর্ডে চ্যালেঞ্জ করে জিপিএ ৫ পাওয়া আদিবা রহমান বলেন, ভালো প্রস্তুতির কারণে আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে আমি জিপিএ ৫ পাব। আমি আমার স্বপ্নের ফল পেতে স্কুলে গিয়ে একটি বিষয়ে ফেল করি। আমি এবং আমার বাবা-মা সুখ থেকে বঞ্চিত। শিক্ষকদের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আমার পরিবারকে।
আরেক শিক্ষার্থী মমতাহা বিনতে বলেন, ‘আমি আইসিটিতে সেরা পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু ফলে আমি তাতে ব্যর্থ হয়েছি। রিটেস্টে জিপিএ ৫ পেলেও আমার সব আনন্দ জলে গেল।
অভিভাবকদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করেই ফলাফলের ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এটা শিক্ষকদের উদাসীনতার বড় প্রমাণ। শিক্ষকদের ভুলের কারণে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। এর দায় কে নেবে? শিক্ষকদের চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।