চট্টগ্রামে বিএনপি-আ.লীগের পাল্টাপাল্টি হামলা
চট্টগ্রামে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা শেষে নগরীর খুলশী থানার ওয়াসা মোড়ে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের বিপরীতে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বিএনপি কর্মীরা। এ সময় তারা প্রচারণার গাড়ি ও সড়কে থাকা যানবাহনও ভাঙচুর করে। ভাংচুরের পর চলে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুব লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি কর্মীদের বহনকারী একটি বাস থামিয়ে কয়েকজনকে পুলিশে সোপর্দ করে।
কিছুক্ষণ পর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজী দেউরী সংলগ্ন নসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় থেকে আনুমানিক একশ গজ দূরে দামপাড়া পুলিশ লাইনে নগর পুলিশ সদর দপ্তর অবস্থিত। আর এখান থেকে বিএনপি কার্যালয়ের দূরত্ব আনুমানিক এক কিলোমিটার।
মহিউদ্দিন বাচ্চু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রচার সেলের সমন্বয়ক এবং নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসীরা যখন আমাদের নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করে তখন আমরা উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলাম। সেখানে খবর পেয়েছিলাম যে, বিএনপির মিছিলের পর তারা আমাদের প্রধান নির্বাচনী অফিসে হামলা করেছে। ওই সময় অফিসে কোনো নেতা ছিল না, কয়েকজন কর্মী ছিল। এ হামলার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, মিছিল শেষে বিএনপির কয়েকজন নেতা লালখান বাজার থেকে হেঁটে ওয়াসা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। তারা হঠাৎ নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। কেউ কেউ ভেতরে গিয়ে প্রচারণার ব্যানার ছিঁড়ে, চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এছাড়া কার্যালয়ের সামনে রাখা নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এরপর তারা সড়কে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এলে তারা পালিয়ে যায়।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, “বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের গাড়ি ওয়াসার মোড়ে দাঁড় করানো ছিল। দেওয়ানহাট থেকে পদযাত্রা শেষ করে কয়েকজন নেতাকর্মী ওই বাসগুলোতে উঠতে যাচ্ছিলেন। তারা আমাদের নির্বাচনী অফিসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।এ সময় তারা একটি পাজেরো, একটি প্রাইভেট কার এবং আমাদের প্রচারণার ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।রাস্তায় থাকা গাড়িও ভাংচুর করে এবং মোট ২০ থেকে ২৫টির বেশি গাড়ি ভাংচুর করে বিষয়টি জানাজানি হলে জিইসি মোড় থেকে ছাত্রলীগ-যুব লীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন কার্যালয়ের দিকে একত্রিত হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে একটি বাস আটকে দেওয়া হয়। পুলিশ বাসে উঠে পালানোর চেষ্টাকালে হামলাকারীরা নিজেদের উত্তর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা বলে পরিচয় দিয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ছাত্রলীগ-যুব লীগের নেতাকর্মীরা নাসিমন ভবন বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। তারা কয়েকটি ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। পরে নসিমন ভবনের সামনের সড়কে ব্যানার জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ওই সময় সেখানে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “লালখান বাজার বা ওয়াসা মোড়ে আমাদের কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। পদযাত্রাটি নসিমন ভবন থেকে শুরু হয়ে দেওয়ানহাটে গিয়ে শেষ হয়েছে। তাছাড়া আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের প্রশ্ন আওয়ামী লীগের লোকজন হয়তো আমাদের কাঁধে চাপাচ্ছে, উল্টো ছাত্রলীগ-যুব লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের অফিসে হামলা ও ভাংচুর করেছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুপুর ২টা থেকে বিএনপির মিছিল। এটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। জানা গেছে, ওয়াসা মোড়ের নির্বাচনী অফিসে ফ্লাইওভার থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে তাদের সঙ্গে থাকা শ্রমিকরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়ে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। পরে কয়েকজন নসিমন ভবনের দিকে আসেন। আমরা তাদের নিযুক্ত করেছি। তারা চলে গেছে এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যোগাযোগ করা হলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।