চট্টগ্রামে গবেষনায়, করোনা আক্রান্ত ৯৪% রোগীর শরীরে ডেণ্টার ধরন
ভারতীয় ডেল্টা ধরনের করোনাভাইরাস মারাত্মক আকারে চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। গবেষকরা করোনাভাইরাসের ৩০ টি নমুনা পরীক্ষা করেছেন এবং ২৮ জনের শরীরে ডেল্টা ধরনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। ফলস্বরূপ, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রায় ৯৮ শতাংশ ডেল্টা ধরন সংক্রমিত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন করোনা প্রতিরোধক টিকাও নিয়েছেন।
চট্টগ্রামের দুই প্রতিষ্ঠানের নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের মধ্যে ১৮ জন নারী এবং ১২ জন পুরুষ ছিলেন। এটা উদ্বেগের বিষয় যে নিহতদের অর্ধেকই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। বাকি অর্ধেক মহানগর। ভারত থেকে ফিরে আসা আত্মীয়দের মাধ্যমে এই রোগ শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। গবেষকরা বলেছেন যে, পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে এই ভাইরাস ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি (সিভাসু) এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল (বিসিএসআইআর) যৌথভাবে ‘ক্যাভিড -১৯ সহ রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মূল্যায়ন’ শিরোনামে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন শিবাসুর উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাস। শিবসুর অধ্যাপক পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, শারমিন চৌধুরী, চিকিৎসক ইফতেখার আহমেদ রানা, ত্রদীপ দাস, প্রাণেশ দত্ত, সিরাজুল ইসলাম, তানভীর আহমেদ নিজামী এবং বিসিএসআইআর -এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিম খান এবং সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোরশেদ হাসান সরকারও গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।
গবেষণার জন্য, ১ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২১ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো।এর মধ্যে ডেল্টা ছাড়া বাকি দুটি নমুনার একটি আলফা (যুক্তরাজ্য)ধরন এবং অপরটি চিনের উহানে শনাক্ত হওয়া ধরন। ৩০জনের মধ্যে ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি। বাকিরা বাড়িতে চিকিৎসা নেন বাসায়।
উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ বলেন, ইন্ডিয়ান ডেল্টা সারা চট্টগ্রামে আধিপত্য বিস্তার করছে। কিছু নমুনা নেওয়াদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে ফিরে আসার পর ডেল্টা তাদের মাধ্যমে সামাজিক সংক্রমিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।
অধ্যাপক পরিতোষ কুমার বলেছিলেন যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু লোকের গুরুতর লক্ষণ রয়েছে এবং কারও কারও হালকা লক্ষণ রয়েছে। চট্টগ্রামে এবং সারা দেশে যে ধরনের ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছিল তা বর্তমানে নেই। গবেষকদের মতে, চট্টগ্রাম শহর ও গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় কাজ করে। তাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে বাড়ি গেছেন। সেখানে কিছু সময় থাকার পর তিনি আবার ফিরে আসেন। তাদের আসা -যাওয়ার মধ্য দিয়ে ডেল্টা সংক্রমণ শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব অধ্যাপক মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, বর্তমানে আক্রান্তদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন। এর আগে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, আমরা আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন অনেক রোগী দ্রুত মারা যাচ্ছেন। রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি এবং মৃত্যুর জন্য ডেল্টা ধরন দায়ী।
এদিকে জুলাইয়ের তুলনায় চলতি মাসে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এই মাসে মাত্র ছয় দিনে ৬,৭০১ জন সংক্রমিত হয়েছে এবং ৭৪ জন মারা গেছে। এই ধরনের ঊর্ধ্বমুখী হার গত ১৬ মাসে দেখা যায়নি। গত বুধবার এক দিনে ১,২৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৮৮,৬৬০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরের ৬৫,৮১২ জন এবং ১৪টি উপজেলায় ২২,৮৪৮ জন। এক হাজার ৩৬ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ৬০৮ জন মহানগরীতে এবং ৪২৮ জন গ্রামাঞ্চলে।