চট্টগ্রামের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট।দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা, কাজ নেই বেতন নেই
কলেজ শিক্ষকের বেতন প্রতিদিন ৪০০ টাকা। তাও ‘কাজ নেই, বেতন নেই’ ভিত্তিতে। অর্থাৎ কোনো কারণে কলেজে না গেলে এই টাকা পাওয়া যায় না। অন্য কোন সুবিধাও নেই। চট্টগ্রামের সেরা সরকারি কলেজগুলোতে ‘অতিথি শিক্ষকদের’ নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর সরকারি পর্যায়ে সেরা পাঁচটি কলেজ হলো- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ ও মহিলা কলেজ। এসব কলেজে ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ও ৪৫০ জন শিক্ষক রয়েছেন। সে হিসেবে ১৫৫ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন। তবে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে কলেজগুলোকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ‘সেমিনার ফি’ হিসেবে সংগৃহীত টাকা থেকে এসব শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। অনেক সময় কলেজের ‘বিবিধ’ তহবিল থেকেও বেতন দেওয়া হয়। এই পাঁচটি কলেজে অতিথি শিক্ষক রয়েছেন ৫ থেকে ১০ জন। শুধু এসব কলেজে নয়, অন্যান্য সরকারি কলেজেও অতিথি শিক্ষক রয়েছেন।
অনার্স-মাস্টার্স কোর্স পরিচালনাকারী চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক আছেন ৮৬ জন। অনেক কোর্সে কোর্স পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। কলেজে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা এবং বাকি ২৮ জন দৈনিক বেতন পান ৪০০ টাকা। কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার নূর বলেন, কলেজটিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) পাঠদান করা হয়। ) এবং স্নাতকোত্তর বিষয়। শিক্ষকের অভাবে নিয়মিত পাঠদান করা সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমরা অতিথি শিক্ষকদের নিয়োগ করি। বেতনের কথা না বললেই নয়। বিষয়টি আমাদের বিবেকের ওপর থাকলেও আমরা তা করি না। কিছু.’ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক শিক্ষক বলেন, “অনার্স-মাস্টার্স পাস করে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে গেস্ট টিচার হিসেবে কাজ করছি।” সবাই মনে করে আমি বিখ্যাত কলেজে পড়াই। কিন্তু বলতে গেলে আত্মসম্মান লাগে। আমি যে বেতন পাই।
চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে অতিথি শিক্ষক রয়েছেন ১২ জন। তাদের বেতন অন্যান্য কলেজের সমান উল্লেখ করে অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুদীপা দত্ত বলেন, ‘কলেজটির দিবা ও সন্ধ্যা শাখায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। মোট শিক্ষক ১১০ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন অতিথি শিক্ষক। তবে পরিস্থিতির সমাধান করা যাচ্ছে না। আবার চাইলেও অতিথি শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন দিতে পারছি না।’
চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে ১৩ জন এবং সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ১১ জন অতিথি শিক্ষক রয়েছেন। মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম তাদের মান অনুযায়ী বেতন দিতে না পারার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ সুসেন কুমার বড়ুয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থীদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া যাবে না। তাই এগুলো ধরে রাখা যাবে না। একজন চলে গেলে আরেকজনকে নিয়োগ দিতে হবে। এটা প্রতি মাসেই হয়।
একসময় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বেশ কয়েকজন অতিথি শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে চার-পাঁচজন আছেন। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, আমি অতিথি শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন দিতে পারি না। তাই শিক্ষকের স্বল্পতা থাকলেও আমরা সহজে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করি না। আমি নিজে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করি।’