• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন মাফিয়া নেতা

    তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন। তিনি হয়ে ওঠেন চট্টগ্রামের রাজনীতির মাফিয়া নেতা। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ জেলা, তিন চট্টগ্রাম পার্বত্য এমনকি টেকনাফ ছাড়াও তিনি কাউকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেননি। এই রাজনীতিবিদ হলেন সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নগরীর পাঁচলাইশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একটি পার্ক দখল করতে চাইলে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। এ দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে দ্বিতীয় দফায় মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাননি আ জ ম নাছির। আর পার্কটিও চলে যায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের কর্তৃত্বে।

    চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের ছয়বারের সাবেক সংসদ সদস্য এই সাবেক সংসদ সদস্য তার ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেলকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন। দলীয় হাইকমান্ডের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে দলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের হুমকি দেন তিনি।

    সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। মোশাররফ হোসেনের অনুসারীরা গিয়াস উদ্দিন ও তার অনুসারীদের নির্বাচনে দাঁড়াতে দেয়নি। গিয়াসের নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ গিয়াস উদ্দিন প্রথমে এলাকা ছেড়েছেন। অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন।

    সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাবেক এই মন্ত্রী চট্টগ্রামের মিরসরাই ও জোরারগঞ্জে দায়ের করা একাধিক মামলার প্রধান আসামি। জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জোরারগঞ্জ থানায় দায়ের করা ৪টি মামলার প্রধান আসামি প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন। এছাড়াও তিনি মিরসরাই থানার তিনটি মামলার প্রধান আসামি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কত মামলা রয়েছে।

    এক সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, মহানগরের সভাপতি ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং উত্তর জেলার সভাপতি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বাবু ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মোশাররফ সমগ্র অঞ্চলে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকায় নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে তিনি বিরোধী দল ও দলের বিভিন্ন মতের লোকজনকে দমন করতে থাকেন। তার বিরুদ্ধে রেলের জমি দখল করে ব্লক কারখানা, পারিবারিক ট্রাস্টে অনুদানের নামে চাঁদাবাজি, দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য, টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিক্রির মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সরকারি রাজস্বের ৩০ লাখ টাকা দিয়ে নিজের নামে কোমর আলী মোশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, অনুগত বাহিনী তৈরি ও গডফাদার সেজে দখলের অভিযোগও রয়েছে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। এসব কাজে তার প্রধান সহকারী ছিলেন মাহবুবুর রহমান রুহেল। ইসলাম বাহিনী, খোকন বাহিনী, মিঠু বাহিনী, কামরুল বাহিনী নিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রশাসনকে তিনি ইচ্ছামতো দলীয় শক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

    মন্ত্রী থাকাকালে মোশাররফ হোসেন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত হন। সে সময় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিজাত বাড়ি তৈরি করেন। তার অনুগত বাবলু মানিক নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রামের গণপূর্ত ভবন দখল করে সব ঠিকাদারি কাজ এককভাবে বরাদ্দ করে। মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী হওয়ার আগে বাবলু মানিক দেশের বাইরে ছিলেন। মোশাররফের মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর বাবলু মানিক ফ্রান্সে পালিয়ে যান।

    তার বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কক্সবাজার অভিমুখে লংমার্চের কনভয়ে হামলার নির্দেশ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলার নির্দেশ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ জিপসনকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এবং মিরসরাই উপজেলা বিএনপির কার্যালয় খালি করা।

    গত ৬ অক্টোবর মিরসরাই থানায় মামলা করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ গিপশান।মিরসরাই উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মঈন উদ্দিন লিটন। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা, ভাঙচুর ও আহতের ঘটনায় একই থানায় ১২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। এ ঘটনায় বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।