• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    গ্রাহক দিতে চান পাওনা টাকা, ব্যাংক তা নিচ্ছে না।বেসিক ব্যাংক কর্তৃক আত্মসাৎকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে জটিলতা

    গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা ফেরত দিতে চান, তবে ব্যাংক তা নিচ্ছে না – এ জাতীয় ঘটনা খুব কমই ঘটে। জনগণের অর্থ মূলত ব্যাংকগুলিতে জমা হয়। যদি কোনও ঋনগ্রহীতা এই অর্থ জনগণের কাছ থেকে আত্মসাৎ করে তবে তা পুনরুদ্ধার করা ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দুর্নীতির মামলার আসামী এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গ্রাহকরা ঋন পরিশোধ করতে চান, কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে ব্যাংক সেই টাকা নিচ্ছে না। বেসিক ব্যাংক এর সূত্র মতে, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারী মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামিরা আত্মসাতের টাকা ফেরত দিতে চায়। এটি নিয়ে তারা ব্যাংক ও দুদকের কাছেও যোগাযোগ করছে। যদিও দুদক আত্মসাতকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে, তবে এটি ব্যাংকের বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। একেক পক্ষের মতামত ও ব্যাখ্যার কারণে ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আমলে আত্মসাতকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। দুদকের আইনজীবী অর্থ পুনরুদ্ধারের আইনী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ই মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি বিভাগ (বিআরপিডি) ‘ঋন পুনর্নির্ধারণ ও এক-সময় নির্বাহের বিষয়ে বিশেষ নীতি’ শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তি জারির ৪-৫ মাসের মধ্যে, দুদকের মামলায় জড়িত  ১৫জন ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের ঋনপুনরায় নির্ধারণ করেছেন। এর পরে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দুদকের মামলায় জড়িত ১৫ জনসহ ৮২ জনের l ঋনপুনঃনির্ধারণের সুযোগটি বন্ধ করে দেয় যে তারা উল্লেখ করে যে তারা ব্যবসায়ী নয় দুর্নীতিগ্রস্থ ছিল।

    বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো: আবুল হাশেম বলেন, দুদকের মামলায় জড়িত তৎকালীন ব্যাংক গ্রাহকগণের পাওনা আদায়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, যে আইনি প্রক্রিয়াতে বকেয়া টাকা আদায় করা যায় তা নিয়ে শিগগিরই বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে। বোর্ডের বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হবে যাতে ব্যাংক আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পারে।

    দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন সমকালকে বলেন যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঋণ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখন, যদি সেই গ্রাহকরা পুরো দায়িত্ব নেন এবং ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋন পুনরায় নির্ধারণ করতে চান, তবে ব্যাংক তাদের সেই সুযোগ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে একদিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋন হ্রাস পাবে; অন্যদিকে ব্যাংকের আয় বাড়বে। বেসিক ব্যাংক যদি এই গ্রাহকদের ঋন পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনও আইনি জটিলতা অনুভব করে তবে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

    বেসিক ব্যাংকের এমডি মো: রফিকুল আলম বলেন যে, গত বছরের ১৬ই মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি শাখার জারি করা ৫ নং বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে কোনও গ্রাহক মোট খেলাপি ঋনের ২% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋন পুনঃনির্ধারণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যারা বিভিন্ন সময়ে ব্যবসা হারিয়েছেন তাদের জন্য এই সুযোগটি কেবল। খেলাফি গ্রাহকরা দুটি উপায়ে এর সুবিধা নিতে পারবেন। এর মধ্যে একটি ‘প্রস্থান’: এই প্রস্থানের আওতায় আপনি এক বছরের মধ্যে পুরো ঋন পরিশোধ করতে পারবেন। দ্বিতীয় সুযোগটি হ’ল ‘কিস্তিতে’ অধীনে সর্বোচ্চ দশ বছরের মধ্যে ঋন শোধ করার সুযোগ পাওয়া।

    দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান  বলেন, অভিযুক্তরা যখন আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দিতে চায় তখন প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়। এক্ষেত্রে টাকা ফিরিয়ে দিলেও অপরাধ থেকে তাদের রেহাই দেওয়া হবে না। বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ৫৬ টি মামলা তদন্ত করছে দুদক। এতে জড়িত যে কোনও আসামি যদি টাকা ফেরত দিতে চান তবে তাদের দুদকে আবেদন করতে হবে। তাদের আবেদন পাওয়ার পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। যদি তাদের অর্থ জমা দেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দুদক তাদের জানিয়ে দেবে কোথায় এবং কীভাবে টাকা জমা দেওয়া যায়।

    মন্তব্য করুন