গ্যাস জরিপের বিস্ফোরণে কাঁপছে কমলগঞ্জ
গ্যাসের সন্ধানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটছে। এই তীব্র বিস্ফোরণে মাটির ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে ড্রিল করার পর বারবার বাড়িঘর ও অর্ধ-নির্মিত ঘরবাড়িতে কম্পন হচ্ছে। শিশু ও অসুস্থ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মাটির বাড়ি, বিশেষ করে চা শ্রমিকদের পুরনো বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ঝড়ের তাণ্ডবে টিউবওয়েল ও কংক্রিটের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন তারা।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ, খনন ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলার পারকাউশার ইউনিয়নের ধুপাতিলা গ্রাম ও শমশেরনগর এলাকায় গ্যাস জরিপের এসব ব্লাস্টিং কার্যক্রম চলছে। অভিযোগ, চা বাগান, ফসলি জমি থেকে শুরু করে বসতবাড়ির আঙিনা, খনন ও বিস্ফোরণ হচ্ছে।
দেওচড়া চা বাগানের রাজু গোর জানান, বিস্ফোরণে তার বাড়ির দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এভাবে চা বাগানের আরও অনেক শ্রমিকের দেয়ালে ফাটল দেখা যাচ্ছে। শ্রীসূর্য গ্রামের সমাজসেবক ফতিকুল ইসলাম, সৈয়দ মিয়া, আক্তার মিয়া, শেরওয়ান আলী, ধুপাতিলা গ্রামের আতিকুর রহমান জানান, সিএনপিসির লোকজন দল বেঁধে কাজ করছে। অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে। বাড়িঘর ঘিরে যে হারে বিস্ফোরণ হচ্ছে তাতে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।
পরিবেশকর্মী নুরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, বসতবাড়ির কাছে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রতিদিন ২০০-৩০০টি বিস্ফোরণ। এটি মাটির স্তরের পরিবর্তন, পানি দূষণ, নলকূপের সমস্যা, বন্যা এবং ভূমিকম্পে ভূমিধসের কারণ হতে পারে। সর্বোপরি পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতারও মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বসতভিটা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে জরিপ করা উচিত ছিল।
সিএনপিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমাম হোসেন জানান, পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে জরিপের কাজ চলছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে জরিপ ও খনন কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের ২০টিসহ সারাদেশে ৪৯টি চা বাগানকেও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এসব কাজে ফসল বা ঘরবাড়ির কোনো ক্ষতি হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান জানান, বিস্ফোরণে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিকট শব্দে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, সরকারের অনুমতি নিয়ে তারা জরিপ করেছেন। তবে বাড়ি থেকে অন্তত ৮০ মিটার দূরত্বে বিস্ফোরণ হতে পারে বলে জানা গেছে।