জাতীয়

গোল্ডেন মনিরের সেই স্কুল অনিয়মের আখড়া।৯ কাঠা জমি বরাদ্দ পেতে ব্যয় মাত্র ৭৬৫ টাকা

দুর্নীতি, অনিয়ম ও চোরাচালানের মাধ্যমে একজন সাধারণ বিক্রয়কর্মীর কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হওয়া মনির হোসেন ওরফে ‘গোল্ডেন মনির’ বাবার নামে বাড্ডায় একটি স্কুল স্থাপন করেছেন।

মনির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ডিআইটি প্রকল্পের দশ নম্বর রোডে তার বাবা সিরাজ মিয়ার নামে মেমোরিয়াল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১ ডিসেম্বর বাড্ডার স্থানীয় বাসিন্দারা রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। এতে তারা বলেন, ‘মনিরের বাবা সিরাজ মিয়া ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার। রাজউকের সরকারী জমিতে রাজাকার নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করতে হবে। তারা শেখ রাসেল বা রাজউকের নামে এটির নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছে।রাজউকের তৎকালীন অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে অনৈতিক চুক্তির ভিত্তিতে মনির ‘নামমাত্র দামে ১৫ কাঠা ৪ ছাতক জমি বরাদ্দ নিয়ে মনির রাউজাকের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিজের নামে জমি বরাদ্দ করেন। তৎকালীন গৃহায়ন ও নির্মাণমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের সহযোগিতায়। এ সময় এই জমির মূল্য ছিল এক কোটি টাকারও বেশি। বেশ কয়েকজন বাড্ডারের বাসিন্দার মতে মসজিদ, স্কুল, কলেজ ও খেলার মাঠগুলি তখন এলাকার আক্রান্ত লোকদের বিবেচনা করে রাজউকের প্লট অঙ্কন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির জন্য মসজিদ, স্কুল ও কলেজগুলির জমি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬৫ টাকা। গোল্ডেন মনির কোনওভাবেই বাড্ডা এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য নয়। তারপরেও নিয়ম ভঙ্গ করে তার নামে ১৫ কাঠা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরে মনির সেখানে পাইলিং না করে রাতারাতি ভবনটি নির্মাণ করেন। কেবল উঁচু দালানগুলি ইট দিয়ে তৈরি হওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকিতে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।মনির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল কাদির মনিরের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাজাকার সিরাজ মিয়া নামকরণের জন্য স্থানীয়দের পক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করেছিলেন। তবে আবদুল কাদিরের মৃত্যুর কারণে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এবার মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন, মনজুরুল কাদির সুমন ও বাজেয়ার আরও আট সচেতন বাসিন্দা রাজউকের চেয়ারম্যানের সাথে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মনিরের নামে বরাদ্দ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। স্কুল থেকে অর্থ আত্মসাতের ভয়ে গোল্ডেন মনির এখনও এমপিওভুক্ত স্কুলটিতে ভর্তির কোনও উদ্যোগ নেননি।২০ নভেম্বর রাজধানীর মিরুল বদদার ১১ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপরে তাকে ১৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

নব্বইয়ের দশকে মনির একটি পোশাকের দোকানে একজন সাধারণ বিক্রয়কর্মী ছিলেন। পরে তিনি স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি চোরাচালানকারীদের মূল চালিকা হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন, রাজউক এবং গণপূর্তিতে তার প্রভাবের ক্ষেত্রটি তৈরি করেন। তিনি জালিয়াতি করে অনেক প্লট নিয়েছেন। তাঁর এক হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে।

তদন্তে এখন পর্যন্ত মনিরের কোটি কোটি টাকার সম্পদ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি উত্তরার জমজম টাওয়ারের অন্যতম মালিক। পূর্বাচল, উত্তরা, গুলশান, নিকুঞ্জ, বাড্ডা ও বারিধারাতে তাঁর কয়েকশ নামবিহীন প্লট এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের সাথে মনিরের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। মুরগি মিলন হত্যার পরে তার অনেক অবৈধ সম্পদ ভোগদখল করেন।

মন্তব্য করুন