• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    গোলাপবাগ মাঠ লোকারণ্য ।ফখরুল-আব্বাস কারাগারে বিএনপির সমাবেশ

    চারিদিকে দুশ্চিন্তা। সবার কৌতূহল- আজ কী হবে! ঢাকায় কী হবে? নানা নাটকীয়তা, সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা, শীর্ষ নেতাদের গণগ্রেফতার ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির বহুল আলোচিত ঢাকা বিভাগীয় গণসভা আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু সেই সমাবেশ বিএনপির নয়াপল্টনে নয়; এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও পুলিশ প্রস্তাব দেয়নি। রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর উভয় পক্ষই ছাড় দেয়। শুক্রবার বিকেলে দলের নতুন প্রস্তাবিত ভেন্যু যাত্রাবাড়ী থানাধীন গোলাপবাগ মাঠে বিভিন্ন ভেন্যুর প্রস্তাবের পর ২৬ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে কোনো ক্ষতি হলে মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতিও নিয়েছে বিএনপি। তবে অনুমতি দেওয়ার আগের রাতেই গ্রেপ্তার হতে হয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। আশপাশের এলাকায় পুলিশি গ্রেফতারের হুমকি ও সতর্কতা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ ও সফল সমাবেশ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিভাগীয় গণসভা শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।

    সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল বিকেলে শুরু হয় মঞ্চ তৈরির কাজ। একই সঙ্গে সমাবেশস্থলে হাজির হতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠে জড়ো হয়েছেন। অনেকে মাঠে রাত্রিযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিছানাপত্রও নিয়ে এসেছেন। আজ দুপুর ১২টায় এ গণসভা অনুষ্ঠিত হবে। মির্জা ফখরুল কারাগারে থাকায় প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।

    ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও গত কয়েক দিনে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী ঢাকায় এসেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অঘোষিত হুমকি’ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমন পয়েন্টে চেকপোস্ট ও সতর্কতা জোরদার করেছে। সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে গতকাল থেকে যাত্রী ও গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে। লোকজনের চাপ না থাকায় দূরপাল্লার বাসও ছেড়ে যায়নি। তবে পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট না ডাকলেও বাস ভাড়া দেয়নি বিএনপির কাছে। বিকল্প পথ হিসেবে বাস-ট্রেন, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে কর্মীরা ঢাকায় আসেন।

    গত ১২ অক্টোবর থেকে গণপরিবহনে হরতাল, গ্রেফতার ও হুমকির মধ্যে বিএনপি ইতোমধ্যে সারাদেশে ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা অচল, দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশ পরিচালনা ও সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথায় নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দল ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মাসব্যাপী বাকযুদ্ধকে ‘খেলা হবে’ বলে বারবার হুমকি দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। সমাবেশের দুই দিন আগে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা তাদের দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও সেদিন সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঢাকায় সমাবেশ হচ্ছে।

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ৯টি বিভাগে শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা করেছি। সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় ভিড় নেমেছে। বহু নেতাকর্মীকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে। গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তবে আমরা ধৈর্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চাই। কিন্তু মনে হচ্ছে, সরকার অন্য কিছু চায়।’

    নাটকের সমাপ্তি: বিএনপির পূর্বঘোষিত গণসমাবেশের মাত্র ২০ ঘণ্টা আগে টানা কয়েকদিনের নাটকীয়তার অবসান হলো। বিএনপির প্রতিনিধি দলের অনুরোধের পর শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলের ঘোষণা আসে। সোহরাওয়ার্দীতে দেওয়া ২৬ শর্তে আজ গোলাপবাগে সমাবেশ হবে। তারা আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গোলাপবাগ মাঠটি সমাবেশের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। তবে কয়েকদিন ধরে পুলিশ-বিএনপির পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে নয়াপল্টনে পানি ঘোলা করার পাশাপাশি রক্তপাতও হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই বলছিলেন, ভেন্যু নিয়ে একমত হয়েছে। বিএনপির দাবি ছিল নয়াপল্টনের বদলে কমলাপুর স্টেডিয়াম দিতে হবে। আর মিরপুরের বাংলা কলেজ মাঠকে র‌্যালি পয়েন্ট হিসেবে দেখায় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

    মন্তব্য করুন