গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন।তদন্ত কমিটি ১৪৫ জনের বক্তব্য শোনেন
বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এ পর্যন্ত ৬৮৫ জনকে নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। এদের মধ্যে ফুলছড়ির ১৪৫ জন আজ গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে জবানবন্দি নিয়েছেন। এ সময় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষের ‘ডাকাত’ শনাক্ত হলেও কোনো এক সময় সে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটি আগামীকাল বুধবার সাঘাটায় যাওয়ার কথা বলেছে।
গাইবান্ধা জেলা ও ফুলছড়ি প্রতিনিধি জানান, তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার সকালে গাইবান্ধায় পৌঁছায়। নোটিশ পাওয়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে উপস্থিত হলে সকাল ৯টায় তাদের বক্তব্য নেওয়া শুরু করেন। তদন্ত কমিটি ফুলছড়ির ১১টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ ১৪৫ জনের বক্তব্য শোনেন।
ওই সময় একাধিক প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে বহিরাগতদের প্রবেশের জন্য পুলিশকে দায়ী করে তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য রাখেন বলে জানা গেছে। তারা কোনো অনিয়ম অস্বীকার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান। এ সময় সিসিটিভি ফুটেজ দেখায় তদন্ত কমিটি।
কমিটি ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজের কাছে ফুটেজ দেখিয়ে কঞ্চিপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রবেশকারী বহিরাগতের পরিচয় জানতে চায়। উপজেলা চেয়ারম্যান তার পরিচয় নিশ্চিত করলে কমিটি অবিলম্বে ওই ব্যক্তিকে হাজির করতে বলে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যান কমিটিকে জানালে তিনি তাকে নিয়ে আসার পথে পালিয়ে যান।
এদিকে ফুলছড়ির একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রাখলে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যেত। তদন্ত কমিটিকে তিনি এ কথা জানান। তার মতে, কোন প্রতীকে প্রার্থী তা নির্ধারণ করা সম্ভব না হলেও গোপন কক্ষে বেশ কয়েকজন প্রবেশের পর দায়িত্বরত পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
শুনানিতে অংশ নেওয়ার পর কঞ্চিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফিরোজ কবির জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের আদেশ পাওয়া গেছে।
চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে তদন্ত কমিটি বলেছে, ‘আপনি কি তাকে চেনেন?’ জবাবে আমি বললাম, হ্যাঁ, এটা আমার ছবি। তারা বলেন, কেন্দ্রে বহিরাগতরা ঢুকেছে বলে পুলিশকে জানাননি কেন? আমি বললাম, আমি দ্বিতীয় তলায় আছি। আমি নিচে না গিয়ে উপরে যাইনি।’
তদন্ত কমিটির সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে বলেন, নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী অংশ নিলেও অনেক কেন্দ্রে একজন প্রার্থীর এজেন্ট দেখা গেছে। একজন এজেন্ট ভোটারদের বারবার নির্বিঘ্নে ভোট দিতে সাহায্য করছিলেন। অনেক কেন্দ্রের সিসিটিভি ক্যামেরার তার কেটে ফেলা হয়েছে।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ জানান, তারা এ পর্যন্ত ৬৮৫ জনকে নোটিশ দিয়েছেন। এই সংখ্যা বাড়তে পারে। বুধবার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে ৪০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২৭৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ২০০ পোলিং এজেন্ট, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৫২২ জনের শুনানি হবে। .
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র্যাবের দুই কমান্ডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপির বক্তব্য শোনা হবে।
সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে গত বুধবার সকাল ৮টায় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুপুরে পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে চারজন ভোটদানে বিরত থাকেন। এরপর রাজধানীতে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে গোপন বুথে ঢুকে ভোট নেওয়াসহ নানা অনিয়ম দেখে প্রথমে ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি। দুপুর ২টার দিকে পুরো নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক অশোক কুমার দেবনাথ, অতিরিক্ত সচিব, ইসি সচিবালয়। সদস্য সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী ও সদস্য যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।