গরুর মাংস ২০০ টাকা, মুরগি ১০০ টাকা।রমজানে অসহায় মানুষের পাশে রয়েছে খুলনার বিভিন্ন সংগঠন
“মাইয়ার স্কুলের রেজাল্ট দেওয়ার পর ডিসেম্বরে আমি আধা কেজি গরুর মাংস কিনছিলাম। এরপর আমি মাংসের দোকানেও যাইনি। হুইনা আইসা দেহি বিকেলে ২০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছে। চার মাস পর আমরা আজ মাইগে গরুর মাংস খাব।’ খুলনা পাবলিক কলেজের সামনে একটি স্বল্পমূল্যের মাংসের দোকানে দাঁড়িয়ে ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।রমজান মাসে কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছে।এখানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। ২০০ টাকা ও মুরগি ১০০ টাকায়।এই আয়োজনে দুপুর থেকেই স্বল্প আয়ের মানুষ ভিড় করেন।
ফাতেমা বেগম ও তার স্বামী সোবহান হোসেন বয়রা বাজার এলাকায় ফুটপাতে ছোলা ও ভাজা বিক্রি করেন। দুই মেয়েসহ চারজনের সংসার তাদের। ফাতেমা বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় করি। সেই চাল-ডাল দিয়ে মায়ানদের লেহাপড়া খরচ দিয়ে ভালো কিছু খাওয়া হয় না। মালার দিন পরে গরুর মাংস কিনতে ভালো লাগে।
শুধু সস্তা গরু বা মুরগির মাংস নয়; রমজান মাসে নানা উপকরণ নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় খুলনার তরুণরা। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে কেউ নিম্নবিত্ত পরিবারের কাছে বাজারজাত করছেন, কেউ পথচারীদের ইফতার দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পরিবারকে পুরো মাসের ইফতার সামগ্রী উপহার দিচ্ছেন।
ছোট আকারের গরুর মাংস ও মুরগি: পাবলিক কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে সেবামূলক কাজ করে আসছে। কম দামের মাংসের দোকান এই প্রথম। উদ্যোক্তাদের একজন আল মাসুম বিল্লাহ বলেন, দ্বিতীয় রমজান থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম হাড় ও চর্বিবিহীন গরুর মাংস একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনে প্যাকেট করা হয়। প্রতিটি প্যাকেট বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম মুরগির ড্রেসিং পরে বিক্রি হয় ১০০ টাকায়।
তিনি বলেন, বুধবার গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও মুরগির মাংস আড়াই টাকায় কেনা হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্ররা নিজেরাই বাকিদের ভর্তুকি দেয়। প্রথম চার দিনে ১৮ কেজি মাংস বিক্রি হয়েছে। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। ২৭ রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন প্রতিটি এলাকায় এ কার্যক্রম চলবে।
মোড়ে ইফতার বুথ: ফুড ব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পথচারীদের রোজা রাখার জন্য নগরীতে তিনটি এবং রূপসায় একটি ইফতার বুথ স্থাপন করেছে।
সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ জানান, নগরীর পিটিআই মসজিদের পাশে আমাদের ইফতার বুথ, শিববাড়ি মোড়ে পুলিশ বক্স ও ময়লাপোতা মোড়ে আকবর স্টোর এবং রূপসাই বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে রয়েছে।
রোজাদার পথচারীরা এখান থেকে বিনামূল্যে ইফতার বক্স নিতে পারবেন।
এ ছাড়া ফরাজীপাড়া অফিসে খোলা হয়েছে ইফতারখানা। সেখানে প্রতিদিন ৪০ জনকে ইফতার করা হয়। দোকানি, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিন ইফতার খানায় ইফতার খায়। বিভিন্ন মানুষের অনুদানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা সেগুলো বিতরণ করেন।
অসহায়দের ইফতার সামগ্রী : খুলনা ব্লাড ব্যাংক রমজানের শুরু থেকেই পথচারীদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। সন্ধ্যায় শিববাড়িসহ নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠনের সদস্যদের ইফতারির প্যাকেট বিতরণ করতে দেখা যায়।
সংগঠনের সভাপতি শেখ সালাহ উদ্দিন সবুজ জানান, বৃহস্পতিবার শারীরিকভাবে অসুস্থ ৫০টি পরিবারকে ইফতার সামগ্রী দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে খোরা বস্তির ৮০টি পরিবারকে খাবার ও ইফতার দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য হল রমজান মাসে ইফতারের জন্য পরিবারগুলিকে অন্য কারও কাছে যেতে না হয় তা নিশ্চিত করা।