গভীর রাতে এক প্লেট ভাত এবং চারটি ক্ষুধার্ত মুখ
মধ্যরাতে রাস্তার অন্ধকার দিক থেকে হাসতে হাসতে বাচ্চাদের আওয়াজ শুনা যায়। একটি ভবনের কর্নিশের নীচে ফুটপাতে বসে মা তার তিনটি ছোট বাচ্চার মুখে ভাত তুলে দিচ্ছেন পরম স্নেহে। আর তার পাশেই রয়েছে আরও একটি শিশু। সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর লালমাটিয়ার আরঙ্গ্যা বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
ফার্মগেট থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং মিরপুর রোডের দিকে, আড়ংয়ের বিক্রয় কেন্দ্রটি দেখা যায়। সারা দিন জুড়ে বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি সহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকের সমাগম হয়, তবে মাঝরাতে এটি পুরোপুরি চলে যায় ছিন্নমূলদের দখলে। তবে ইট-পাথর ভবনে প্রবেশের সৌভাগ্য তাদের নেই। তাদের সীমানা প্রবেশ পথে লক করা কেচি গেট পর্যন্ত। মাথার উপর সামান্য পরিমাণ ছাদ থাকায় অনেক লোক প্রবেশ পথের সামনে রাত কাটায়। মা তার ৪ সন্তানের সাথে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তার নাম নাজমা বেগম। তার বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়। স্বামীর নাম দুলাল মিয়া। নাজমা জানান, বছর দুয়েক আগে তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে গ্রামে থাকতেন। পরিবারে দিনমজুরী স্বামীর অভাব থাকলেও তারা দিন কাটাচ্ছিল আনন্দের সাথে। বিয়ের পর তাদের পরিবারে ডিপজল, মোতাহার ও শহিদুল নামে তিন ছেলে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার পড়েই স্বামী নাজমুল অসুস্থ হয়ে পড়েন।
নাজমা বলেন যে এরই মধ্যে চতুর্থ সন্তান লামিয়া কোলে আসে। তার স্বামীর চিকিৎসা, তার পরিবারের ৬ জনের ব্যয় একই। সব মিলিয়ে আমি আমার চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছি। প্রত্যেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হত।
তিনি জানান, এ সময় কোনও উপায় না পেয়ে তিনি ৪ সন্তান নিয়ে ঘড় ছাড়েন তিনি। তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন। তার পর থেকে তারা আরং সিগন্যালে ফুল ও চকোলেট বিক্রি করে ভিক্ষা করে তাদের দিন কাটাচ্ছে।
১০ বছর বয়সী মোতাহার জানান, তারা পালা করে ছোট বোন লামিয়ার খোঁজ রাখে। রাতে তারা যদি আড়ংয়ের সামনে থাকার জায়গা পেলেও দিনে সংসদ ভবনের সামনের গাছের নীচে থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে তারা রাস্তার দ্বীপে পানির ফোয়ারা স্নান করে, কখনও কখনও পাবলিক টয়লেটে। তবে বেশিরভাগ সময় প্রাকৃতিক কাজটি রাস্তার পাশেই করতে হয়।
৮ বছর বয়সী শহিদুল বলেন যে তারা সকলেই দিনে ৪০০-৫০০ টাকা উপার্জন করে। সেই অর্থের বেশিরভাগটি খাবারে ব্যয় করা হয়, এবং বাকী অর্থ সঞ্চয় হয়। ১ মাস পরে তারা বাবার সাথে দেখা করতে যায়। এবং ফেরার পথে, পুরো মাসের জন্য চিকিৎসা এবং খাবারের টাকা বাবার হাতে দিয়ে আসি।