গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়গাথা থাকছে বাজেট বক্তৃতায়
দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা আত্মোৎসর্গ করেছেন। এ আন্দোলনে শহীদ এবং আহতদের স্মরণে রাখতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে থাকবে তাদের বিজয়গাথা অধ্যায়। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, বাজেট বক্তৃতায় সরকারের দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন রূপরেখা তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে বাজেটের লক্ষ্যসমূহ অর্জনে স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য এবং সে উদ্দেশ্যে গৃহীত কার্যক্রম, বাজেট কাঠামো ও অগ্রাধিকার খাতভিত্তিক সম্পদ বণ্টন এবং সম্পদ আহরণের বিষয় তুলে ধরবেন অর্থ উপদেষ্টা। বক্তৃতার শুরুতেই থাকবে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়গাথা। ২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গৌরবময় অধ্যায়। গণ-অভ্যুত্থানের অগ্নিশিখা পুরো জাতিকে একত্র করেছিল ন্যায়, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অভিন্ন স্বপ্নে। সেই সংগ্রামের উত্তাপে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশের মানুষ; তারা বুঝেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হলেই আসে মুক্তি। এই জাগরণের প্রতিধ্বনি থাকবে আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায়।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের অস্তিত্ব। এ জন্য বাজেট বক্তৃতায় অবশ্যই তা তুলে ধরতে হবে।’
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থাকে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে বাজেট বক্তৃতাকে তথ্যসমৃদ্ধ এবং সরকারের চলমান ও ভবিষ্যৎ কর্মকা-ের মূল্যবান দলিল উপস্থাপনের জন্য প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছেন।
জানা গেছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে এসেছে। উচ্চাভিলাষী এসব বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতো না। বছরের শেষ সময়ে এসে সেখানে কাঁচি চালানো হতো। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবতার আলোকে বাজেট তৈরি করছে। বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট তৈরির কাজ চলছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সম্পদ ও বাজেট ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার ধরা হয় দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাজেটের আকার কিছুটা কমানোর জন্য। এ জন্য এডিপির আকারও কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বাজেটের একটি খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। করজাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে। বাজেটে আয়কর খাত থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। থাকবে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং খাদ্য, আবাসন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন করে সমতাভিত্তিক দেশ গঠনের দিকনির্দেশনা। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে বিভিন্ন রকম সংষ্কার কার্যক্রম, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
সূত্রমতে, মূল্যস্ফীতি কমাতে ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এই প্রথম নিয়ন্ত্রণমূলক বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য পাবলিক সেক্টরের ব্যয়ের লাগামও টানা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের লাগামও আপাতত টেনে ধরার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এতে করে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ কমে আসবে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে আইএমএফ ও অর্থ বিভাগ।
এমনিতেই দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। এমন শ্লথ গতি আরও অন্তত দুই বছর চলবে। এর ফলে চলতি বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে। তবে দুই বছর পর এই প্রবৃদ্ধি আবার বাড়তে শুরু করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। এ জন্য আপাতত নিয়ন্ত্রণমূলক বাজেট দিয়ে অর্থনীতির অচলবস্থার উন্নতি ঘটানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর প্রবৃদ্ধি (গ্রোথ) বেশি হবে না, আগেই বলে দিলাম। তবে ঘাবড়ে যাবেন না। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ভাত-ডালের অভাব হবে না। জীবনধারণের জন্য মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে ব্যবস্থা সরকার করেছে। খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে দেশ। আমরা অনেক সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও খুব বেশি সংস্কার করে যেতে পারব না। তবে আমরা কিছু ফুটপ্রিন্ট রেখে যাব। বিশেষ করে এনবিআরের নীতিগত ও প্রশাসনিক পৃথকীকরণ করা হবে। সময় দিচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে চলে যেতে হবে। ফলে এত বেশি সংস্কার করা যাবে না।
Do Follow: greenbanglaonline24