গণমিছিলে লাখো মানুষের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি
গণমিছিলের একযোগে লাখো লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে আগামীকাল দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। এ কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কাজ করছেন।
যুগপৎ কমিটি যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমমনা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করছে। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে তারা যুগপৎ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার কৌশল এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন। বিএনপি নেতারা বিভিন্ন জোট ও দলের নেতাদের মতামত গ্রহণ করেন। তবে নতুন কর্মসূচি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আবারও এসব দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেবে দলটি। এ বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার বিএনপির ঘোষিত এই কর্মসূচিতে তিনটি জোট ও অন্য তিনটি দল এ পর্যন্ত ৩৩টি দলকে সমর্থন দিয়েছে। একই দিন তারা আলাদাভাবে এই কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দেন। এর মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের সাতটি দল, ১২ দলীয় জোটের ১২টি দল, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোটের এগারোটি দল এবং জামায়াত, এলডিপি, গণফোরাম (মন্টু)। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দল নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে দিবাগত রাতে ভোটগ্রহণ হয়। এ দিনটিকে তারা ভোট ডাকতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এবারও সরকার পতনের আন্দোলনে ১০ দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ভোট ডাকাতির দিনও পালন করবেন তারা। এটা করা হচ্ছে গণ মিছিলের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে আরো নতুন প্রোগ্রাম আসছে।
এদিকে সমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের একাধিক নেতা।
শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নয়, ছুটির দিন হওয়ায় তাদের কর্মসূচিতে অনেক সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন বলে আশা করছেন তারা।
বিএনপি নেতারা জানান, গত জুলাই থেকে তাদের রাজপথের কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন খুবই উচ্ছ্বসিত। সারাদেশে মামলা, গ্রেফতার ও হামলার পাহাড় থাকলেও যেকোনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তারা। তাদের মনোবল ধরে রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা, কৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক প্রোগ্রাম থেকে অন্য প্রোগ্রাম সংযোগ. যাতে নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে পারেন। এর মাধ্যমে সরকার উৎখাতের জন্য দফায় দফায় ও চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঢাকায় জনসমাবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকেও অনেক নেতাকর্মী আসবেন বলে অনেক নেতা আয়োজকদের জানিয়েছেন।
জোট ও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক : নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি একই দিনে ও একই সময়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামানোর কৌশল নিয়েছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকায় একযোগে আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ‘গণমার্চ’-এর মধ্য দিয়ে ঐক্যের যাত্রাকে শক্তিশালী করতে চায় বিএনপিসহ বিভিন্ন সরকারবিরোধী দল ও জোট। এ ছাড়া এ কর্মসূচির পর নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে তা ধরে রাখতে ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। এ বিষয়ে সমমনা দল ও জোটের নেতাদের মতামত চাওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘১২ দলীয় জোট’ ও ‘জাতীয়তাবাদী জোট’ নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপির যুগপৎ (সমন্বয়) কমিটির নেতারা। বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র ফোরামের যুগপৎ কমিটির সঙ্গে এবং বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। এসব বৈঠকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, স্বৈরাচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়ার মত প্রকাশ করা হয়েছে।
গণসমাবেশের পথ: নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর-মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত গণসমাবেশ করবে বিএনপি। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই সমাবেশ হবে। একই দাবি নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় গণসমাবেশ করবে জামায়াত। কর্নেল অলির এলডিপিও গণসমাবেশ করবে।