গণমানুষের সংবাদপত্র গড়ে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমান দ্রুততার প্রতিযোগিতায় সঠিক সাংবাদিকতা, সঠিক সংবাদ পরিবেশন এবং একটি সংবাদপত্রকে গণমানুষের সংবাদপত্র হিসেবে গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক দেশ প্রাকন পত্রিকার নতুন সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে দেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক উন্নয়ন বা তাৎপর্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সর্বশেষ খবর সবার আগে দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এবং এটি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে অনেক সংবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে যা বাস্তবিকভাবে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। এটি অনলাইনে আরও ঘটে। সেজন্য স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্বও প্রয়োজন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্র বা যেকোনো গণমাধ্যম শুধু সংবাদ বা বিনোদনের জন্য নয়। একটি পত্রিকা মানুষের তৃতীয় চোখ খুলে দেয়, অনাবিষ্কৃতকে উন্মোচন করে। সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার যারা মনোযোগ দিচ্ছেন না তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক বিতর্ক ভিত্তিক সমাজে বাস করি। এই গণতান্ত্রিক সমাজকে মজবুত ভিত্তির ওপর গড়ে তুলতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। বাংলাদেশে গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে, যেভাবে স্বাধীনভাবে সবকিছু লিখতে পারে, তা বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে সম্ভব নয়। অনেক উন্নত দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি তাদের কাজ ও প্রকাশনা সম্পর্কেও দায়িত্বশীল হতে হয়। ভুল বা মিথ্যা সংবাদের জন্য জরিমানা এবং শাস্তি রয়েছে। আমাদের দেশে এখনো এমন নজির নেই। অনেক সময় প্রেস কাউন্সিল থেকে তিরস্কারও হয়েছে। কারণ তিরস্কার করা ছাড়া পরিষদের কোনো ক্ষমতা নেই। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের মন গঠনে একটি সংবাদপত্র বড় ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ছোটবেলায় অনেক দৈনিক পত্রিকায় শিশুতোষ পাতা ছিল, আমিও সেখানে লিখতাম, এটা খুবই আনন্দের। কিন্তু এখন ছোটদের পাতা নেই, হারিয়ে গেছে। মেকআপের পাতা আছে, রান্নার পাতা আছে, কিন্তু ছোটদের পাতা অনেক ক্ষেত্রেই নেই। আমি দৈনিক দেশ বর্তমান পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব, এক সপ্তাহের মধ্যে না হলেও অন্তত প্রতি ১৫ দিন অন্তর শিশুদের জন্য একটি পেজ থাকুক। এটি আমাদের তরুণদের মন গঠন এবং প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী সমাজের অনাবিষ্কৃত বিষয় নিয়ে সংবাদপত্রে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারে উৎসাহিত করে বলেন, যে পাগল রাস্তায় বকবক করে, তার পাগলামির পেছনে গল্প থাকে। কিন্তু তা কেউ শোনে না, শোনার প্রয়োজনও বোধ করে না। নদীর বন্যা বা অন্য কোনো কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরের ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের স্বপ্নের কথা কেউ লেখে না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিষিদ্ধ জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া মেয়ের বেদনার কথা কেউ ভাবেন না বা লেখেন না। তাদেরও উন্মোচন করা দরকার।
হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমের উন্নয়নে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্য ২০০৯ সালে দৈনিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫০০, এখন তা ১২৫০০-এর বেশি। টেলিভিশনের সংখ্যা ছিল ১০টি, এখন ৩৬টি সম্প্রচারিত হচ্ছে, আরও অনেক শীঘ্রই সম্প্রচার হবে। ২৪টি প্রাইভেট রেডিও লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে, ১৪-১৫টি সম্প্রচারিত। এখানে প্রায় ৩ ডজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত কমিউনিটি রেডিও স্টেশন রয়েছে এবং বেশিরভাগই সম্প্রচারিত। একই সাথে, অনলাইন মিডিয়ারও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে গত ১৪ বছরে, হাজার হাজার অনলাইন প্রকাশনা, নিবন্ধনের জন্য আমাদের কাছে ৫ হাজারের বেশি আবেদন রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক শতাধিক নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক দেশ পঙ্কনের প্রধান সম্পাদক নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, দৈনিক দেশ পঙ্কনের সম্পাদক ও প্রকাশক এস.এম. জমির উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। লাল ঘোষ, সিনিয়র সাংবাদিক শাহিন উল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। বক্তৃতা শেষে কেক কেটে সংবাদপত্রের নতুন সংস্করণের উদ্বোধন করেন অতিথি ও আয়োজকরা।