গড়ে ৯০ টাকা কেজির খেজুর বাজারে ১৮০০ টাকা
চট্টগ্রামের বড় আমদানিকারক ‘আল্লাহ রহমত স্টোর’। রমজান উপলক্ষে কোম্পানিটি ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫০২ টন খেজুর এনেছে। প্রতি কেজি দাম ৭০ টাকা ৫৩ পয়সা। একইভাবে ‘কচমচ এন্টারপ্রাইজ’ প্রতি কেজি ৬৬ টাকা দরে ২৩ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৬১০ টাকা এবং বড় আমদানিকারক ঢাকার গুলশানের মদিনা গ্রুপ তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে ৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ৬ হাজার ১৭৮ টন খেজুর আমদানি করেছে। ১০০ টাকা হারে। এর মধ্যে ৮০ টাকা ১১ পয়সা দরে ৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা মূল্যের ৯ হাজার ৪১৪ টন খেজুর নিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা। আমদানি নথি বিশ্লেষণে এমন দাম পাওয়া গেলেও দেশের বাজারে কোথাও আড়াইশ টাকার নিচে কোনো খেজুর নেই। বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি রমজানে দেশে খেজুরের চাহিদা বাড়ে। এটাকে পুঁজি করে আমদানিকারকরা দামের ভয়ানক কারসাজি করে। এখন খেজুর ভেদে প্রতি কেজিতে তিন থেকে ২০ গুণ লাভ হচ্ছে। আর দাম সিন্ডিকেটে খোদ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন। এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম ও নূর উদ্দিনের মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। দোকানে গিয়েও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তদন্তে দেখা গেছে, আমদানিকারকরা খেজুর আমদানি নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। রমজান উপলক্ষে ২৮ ধরনের খেজুর আমদানি করা হলেও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে সব খেজুরই নিম্নমানের এবং একই দামের। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়া হয়। কিন্তু বন্দর থেকে ছাড়ার পর চিত্র পাল্টে যায়। ব্যবসায়ীরা উন্নত, মাঝারি ও নিম্ন- এই তিনটি বিভাগে বিক্রি করে বাজার থেকে মুনাফা আহরণ করছেন।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দেশে চড়া দামে খেজুর বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মূল্য কারসাজির এই চক্রের সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, “খেজুরের বাজারে ভয়ানক প্রতারণা চলছে। কিছু আমদানিকারক হুন্ডির মাধ্যমে বেশি দামের ঘোষণা দিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করছে। এর মাধ্যমে তারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পকেট কাটছে। ভোক্তারা তিনভাবে তারিখ নির্বাচন করে।মূল্যের কারসাজিতে সিরাজুল ও নূরের যোগসাজশ, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, “অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের মালিক সমিতির সভাপতি। তার দোকানে চড়া দামে খেজুর বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। ২৫ থেকে ২৮ প্রকারের ৯ হাজার ২১১ টন খেজুর আমদানি করেছে। এর মধ্যে একটি এইচএস কোডের বিপরীতে কর আদায় করা হয়েছে।প্রতি কেজি খেজুরের আমদানি মূল্য মাত্র ৮৪ দশমিক ৬৪ টাকা, কিন্তু সিরাজুল ইসলামের দোকানে বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকার বেশি।
মিশরীয় মেজদুল ইরাকি জাহিদি খেজুরের চেয়ে ৩ থেকে ৩০ গুণ বেশি দামী। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসের আমদানিকারকরা সব খেজুরের দাম এক ঘোষণায় এনে উচ্চ শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি তারিখের দাম ১০০ টাকা হলে, আমদানি মূল্যের উপর শুল্ক হবে। ট্যারিফ হার ২৭ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত। এখন যদি ৩০০ টাকার পণ্যকে ১০০ টাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয় তবে শুল্কের হারে কোনও পরিবর্তন নেই। অনেক সময় সরকার দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইরাকের জাহিদী ছাড়াও বাংলাদেশে এমিরেটসের সোনা বেশি বিক্রি হয়। জাহিদীর চেয়ে এর দাম তুলনামূলক বেশি। নাগাল, রেজিস, ডাব্বাস এবং লুলু খেজুরও এমিরেটস থেকে আসে। দুবাইয়ের লুলু, মদিনার মাশরুক, মরিয়ম, কালমি, সাফাভিসহ ২৮ ধরনের খেজুর আসে এ দেশে।