• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতিবিবিধ

    খোলেনি ১৯ কারখানা  এবং ১২১ শ্রমিক বরখাস্ত

    হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি সরকার ও মালিকপক্ষ মেনে নেওয়ার একদিন পর বুধবার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ পোশাক কারখানা খুলেছে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা সব কারখানা চালু থাকবে- মালিকদের এমন ঘোষণা সত্ত্বেও গতকাল বন্ধ ছিল ১৯টি কারখানা। কবে খুলবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশের আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম। এদিকে, অনন্ত গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ভাঙচুর, লুটপাট, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, কাজ না করা, কর্মীদের শারীরিকভাবে ঘুষ দেওয়া এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২১ কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।

    শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, বিভিন্ন সংকটে শিল্পাঞ্চলে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৬৩টি তৈরি পোশাক উৎপাদন হয়েছে।

    কারখানার মধ্যে ১৬৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। আরও ১৯টি কারখানা যুক্ত হওয়ায় বন্ধ কারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮৮টি।

    এরই মধ্যে অধিকাংশ কারখানা খুলে আশুলিয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। মালিকপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ায় শিল্পাঞ্চলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে শতাধিক শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

    সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। কোথাও কোথাও দু-একটি দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে চলে ধর্মঘট। গতকাল বুধবার সকালে শ্রমিকরা অনন্ত গার্মেন্টসে কাজে যোগ দিতে এসে বরখাস্তের নোটিশে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেখানে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। আশুলিয়ার জামগড়া, জিরাবর, নিশ্চিনপুর, নরসিংহপুরসহ শিল্পাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেছে।

    অপরদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মমিন মন্ডলের মালিকানাধীন মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা বাস্তবায়নের দাবিতে জিরাবো এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের শান্ত করে। বিকেলে কাঠগড়া এলাকায় জিহান গার্মেন্টসে এক শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া পুরো শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত ছিল।

    দেশের পোশাক খাতে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন মালিকরা। বৈঠকের পর বুধবার থেকে দেশের সব শিল্প-কারখানা খোলার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

    শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগকারী বিদেশি কোম্পানি অ্যাক্টর স্পোর্টিং, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস, সাউথ চায়না ব্লেসিং অ্যান্ড ডাইং, গোল্ডটেক্স, সিডকো গ্রুপ এখনো তাদের আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। শ্রমিক বিক্ষোভ এড়াতে এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। একটি সূত্র জানায়, যেসব কারখানার শ্রমিকরা নিজেদের অবহেলার কারণে ছুটি ঘোষণা করেছেন তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন।

    অন্যদিকে, পাইওনিয়ার ক্যাজুয়াল, ডিপস অ্যাপারেল, আয়েশা ক্লোথিং পালামাল গ্রুপ, সাফা সোয়েটার শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আগস্টের বেতন পরিশোধ না করায় জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, কারখানায় ভাঙচুরের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সিন অ্যাপারেল, আজুমান ডিজাইনার, ডেকো ডিজাইন, চায়না ইয়াং সাং লেদার কোম্পানি, ভিনটেজ গার্মেন্টস, গামি অ্যাপারেল বন্ধ হয়ে গেছে। বার্ষিক ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায়। বিভিন্ন দাবিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় বন্ধ এএফ ম্যানুফ্যাকচার, বিভিন্ন দাবিতে সাঙ্গু টেক্স কারখানা বন্ধ ঘোষণা ও মালিকপক্ষের চার কর্মকর্তার পদত্যাগ। এ ছাড়া ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে খাঁচাবন্দি খাবার কোম্পানি বন্ধ রয়েছে।

    শিল্প পুলিশ বলছে, যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের আশপাশে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

    বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের দাবি মেনে কারখানা চালু করেছি। আশা করছি, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় পুরোপুরি উৎপাদন ফিরে আসবে। এখন অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে এই খাতকে আরো গতিশীল করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।