জাতীয়

খাস জমি দখলকারীদের জেল ও জরিমানা করা হবে।নতুন আইন আছে

ভূমি মন্ত্রণালয় উচ্ছেদ হওয়া খাস জমি উদ্ধার করতে এবং জেল ও জরিমানা সহ দখলদারদের শাস্তির আওতায় আনতে নতুন আইন প্রণয়ন করছে। আইন বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় মন্ত্রণালয় আইনটির খসড়া তৈরি শুরু করেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে খসড়া তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর পরে এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করা হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়

সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খাস জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলেও দখলদারদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাই জেল, জরিমানা ও অন্যান্য শাস্তির বিধানকে সামনে রেখে আইনটি করা হচ্ছে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, খাস জমি পুনরুদ্ধার এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে। যারা  দখল করেছেন তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনার জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খসড়া তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আইনটি হলে অবৈধ জমি দখলকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মন্ত্রী আরও বলেছেন, কারও মুখ দেখে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হবে না। এক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় সোজা পথে হাঁটবেন। জমির মালিক যেই হোক না কেন, তারা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, সরকারী সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য যা কিছু করা দরকার তা করা হবে।

সূত্র মতে খাস জমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। মাঠ পর্যায়ে, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসল্যান্ড, সহকারী ভূমি অফিসার খাস জমির তদারকি করেন। দেশে প্রায় ৪২ লক্ষ একর খাস জমি রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর খাস জমি উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক খাস জমি দখল করেছেন, কেউ দলিল জাল করে।

ভূমি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সারাদেশে অবৈধভাবে দখল করা খাস জমির পরিমাণ উদ্ধার করা হচ্ছে। বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইন খাস জমি দখলকারীদের শাস্তির বিধান দেয় না। তাই ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নতুন আইন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রমের জন্য অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দের সন্ধান পেলে ঢাকাসহ সারাদেশে উচ্ছেদ অভিযান আরও তীব্র করা হবে।

খাস জমির ডাটাবেস তৈরি হচ্ছে: ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে খাস জমি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘খাস স্থল তথ্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় খাস জমি কোথায়, কোন থানায়, কোন মৌজা, দাগ, খতিয়ান, তা এই মুহুর্তে জানা যাবে। একই সাথে, প্রতিটি খাস জমিতে সরকারী মালিকানা, মাউজা, দাগ, খতিয়ান উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। খুলনা জেলা প্রশাসক ইতিমধ্যে একটি খাস ডাটাবেস তৈরি করেছেন। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খাস জমির ডাটাবেস সারা দেশে পর্যায়ক্রমে তৈরি করা হবে এবং সাইনবোর্ডগুলি স্থল মৌজা, খাতা এবং খঞ্জের সংখ্যা উল্লেখ করে স্থাপন করা হবে।

আইনটি বেসরকারী পর্যায়েও প্রযোজ্য হবে: নতুন আইনে জাল নথির মাধ্যমে জব্দ করা খাস জমি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি জালিয়াতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে জব্দ করা বেসরকারী খাতের জমি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বালু ফেলে ফেলে নদীর জমি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

মোট খাস জমি, আলোচনা সাপেক্ষে, অ-আলোচনাযোগ্য: ভূমি মন্ত্রণালয়

সূত্র মতে, দেশের আটটি বিভাগে মোট কৃষি ও অকৃষি খাস জমি ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৯ একর। এর মধ্যে ছয় লাখ ছয় হাজার ৫৯১ একর বসতিযোগ্য জমি। চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮০৮ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক পরিমাণ খাস জমি রয়েছে।

খাস জমি উদ্ধার হয়েছে

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চলতি অর্থবছরের ২০২০-২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগের ১৩৩ একর এবং ৪৬ শতাংশ জমি উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫১ একর খাস জমি, রাজশাহী বিভাগে ছয় হাজার ৫১৮ একর, খুলনায় চার হাজার ১৮৯ একর এবং সিলেটে ১৮৫ একর ১২ শতাংশ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

খাস জমি রক্ষায় উদাসীনতা

সূত্র মতে, খাস জমি রক্ষার জন্য ডিসি, ইউএনও, এসল্যান্ড এবং ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা দায়িত্বে রয়েছেন। খাস জমি মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা ওই কর্মকর্তাদের চোখের সামনে অবাধে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে খতিয়ান বইয়ের পাতাগুলি ছিঁড়ে এবং বইটিতে জাল পৃষ্ঠাগুলি আটকিয়ে বিপুল পরিমাণ খাস জমি উচ্ছেদ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি মন্ত্রণালয় এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী লোকেরা জাল দলিল তৈরি করে এবং ভূমি অফিসের কর্মকর্তা এবং উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তাদের পরিচালনা করে খাস জমি দখল করছে। এভাবে খাস জমি, জলাশয়, , বিল ও হ্রদ উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন