খালেদা জিয়ার আবেগঘন পুনর্মিলন
‘প্রতিদিন শুনি, এই মরে যাচ্ছে, এই চলে যাচ্ছে। তার বয়স ৮০ বছরেরও বেশি। এ সময়. সে অসুস্থ। এত কান্নাকাটি করে লাভ নেই।’ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে এমন গর্ব করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে গেছে। ছাত্র বিদ্রোহের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অন্যদিকে মুক্ত জীবনে ফিরেছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া লন্ডনে অবাধে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যেখানে শেখ হাসিনা দম্ভ করেছিলেন। খালেদা জিয়া যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন সেটিও কাতারের আমির তার সম্মানে সেই বিমানটিও দিয়েছেন।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শাশুড়িকে স্বাগত জানান তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডাঃ জুবাইদা রহমান। সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। অভিবাসনের কাজ শেষ করে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জহিরুদ্দিন স্বপন বলেন, খালেদা জিয়া জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন, যে জনরোষের মুখে শেখ হাসিনাকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যে অবাধে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। মালিকদের বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশি অলিগার্চ তৈরি করে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, কিন্তু জনরোষের সুনামি উঠলে তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তুলোর মতো উড়ে যায়। শেখ হাসিনার পলায়ন সেটাই প্রমাণ করেছে।
বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, এটাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের গৌরবময় পুনর্মিলন। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি অবিস্মরণীয় দিন।
বাংলাদেশ থেকে আট হাজার কিলোমিটার দূরে লন্ডনের এক উজ্জ্বল সকাল। দোহায় যাত্রাবিরতিসহ প্রায় সাড়ে ১৬ ঘণ্টা পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সকাল ৯টা ৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে আগে থেকেই মা খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ছেলে তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ডাঃ জুবাইদা রহমান। সাত বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা করার সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকা তারেক রহমান বেশ হাসিখুশি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে মাকে কাছে পেলেন। বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার ছেলে ও পুত্রবধূ। বিমানবন্দরে মাকে দেখে তারেক রহমান কাছে গিয়ে শিশুর মতো জড়িয়ে ধরেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। মা ও ছেলের এই মধুর মুহূর্ত এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করে। দীর্ঘদিন পর শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করে আবেগাপ্লুত পুত্রবধূ জুবাইদা রহমানও। সেও শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীরা বিমানবন্দরের চতুর্থ টার্মিনালের রয়্যাল ভিভিআইপি গেট দিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মায়ের সঙ্গে লন্ডনের ক্লিনিকে রওনা হন। স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে তারা হাসপাতালে পৌঁছান। জুবাইদা রহমানও সঙ্গে ছিলেন।
এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। এরপর আর কোনো বিদেশ সফর করেননি। এ সময় তার ছেলে তারেক রহমানও তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেননি। তারা শুধু কার্যত কথা বলেছেন।
এদিকে বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হযরত আলী খান। খালেদা জিয়াকে ভিআইপি প্রটোকল দিয়েছে হিথ্রো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কায়সার এম আহমেদও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বহু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন তিন নাতি-নাতনি।
গতকাল রাতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক জানান, ভর্তির পর বাংলাদেশ থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসা চিকিৎসকরা লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসকদের কাছে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি হস্তান্তর করেছেন। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নথিপত্র শেষে খালেদা জিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে বাংলাদেশের চিকিৎসক ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
Do Follow: greenbanglaonline24