• বাংলা
  • English
  • শিক্ষা

    ক্ষোভে ফেটে পড়ছে গোটা দেশ।শিক্ষক হয়রানি ও হত্যা

    নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হয়রানি ও শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে সাভারে এক স্কুলছাত্র। মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। বক্তারা হয়রানি ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এর মধ্যে আগামী শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মসূচি থেকে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়েছে।

    এদিকে নড়াইল মামলায় হাইকোর্টে রিট করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ পরামর্শ দেন।

    সাভার নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উৎপল কুমার সরকার হত্যার প্রতিবাদে গতকাল আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্টকল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। চার দিনেও প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এ সময় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ ও কিশোর চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধে পদক্ষেপসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়। আর খুনি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত স্কুল শাখা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।

    মানববন্ধনে এক শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালক মো. সুমন ঘটক জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজিরের চাচাতো ভাই। এই শক্তিতে তিনি বারবার অপরাধ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন।

    অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, উৎপল স্যার অনেকবার জিতুকে আমার কাছে নিয়ে এসেছেন। আমরা তাকে সংশোধন করতে চেয়েছিলাম। অভিভাবককেও বলেছি। কিন্তু কোন উপকার. এবার সে আমার সহকর্মীকে ছিনিয়ে নিল! প্রথমে জিতুকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

    মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই এমদাদুল হক জানান, অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং শিগগিরই জিতুকে গ্রেপ্তার করা হবে।

    উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সোমবার রাতে উল্লাপাড়ার লাহিড়ী মোহনপুর শ্মশানে উৎপল কুমারের লাশ ঢাকা ত্যাগের পর দাহ করা হয়। কাঁদতে কাঁদতে তাকে বিদায় জানান স্বজন ও গ্রামবাসী। উৎপলের বৃদ্ধা মা গীতা রানী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলে তিনি বলতে থাকেন, আমার উৎপলকে আইন দাও। সেভাবে সে ছাইলায় যেতে পারবে না।

    এ সময় উৎপলের স্ত্রী বিউটি সরকার, ভাই অসীম কুমার সরকারসহ পরিবারের সদস্যরা জিতু ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

    চবি সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৪১তম ব্যাচের ছাত্র উৎপল হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উৎপলের বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক ফণীভূষণ বিশ্বাস বলেন, জিতু শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করত। শাসনের জন্য উৎপলকে জীবন দিতে হয়েছে।

    সিলেট ব্যুরো জানায়, শিক্ষক স্বপন ও উৎপলের হয়রানির প্রতিবাদে গতকাল সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ। সমাবেশের আগে শহরে বিক্ষোভ করা হয়।

    মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, সাভারে শিক্ষক উৎপল হত্যা ও নড়াইলে স্বপনকে হয়রানির প্রতিবাদে গতকাল মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ করেছে উদীচীসহ একাধিক প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

    নড়াইল প্রতিনিধি জানান, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হয়রানি, মোটরসাইকেল পোড়ানো ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নড়াইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। পরে সোমবার রাতে শাওন খান, মনিরুল ইসলাম ও রিমন আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সদর থানার ওসি শওকত কবির। এর আগে গত ১৬ জুন রাহুল দেব রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

    হয়রানির প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অধ্যক্ষ স্বপনকে শেকল করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ সময় বক্তারা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী রাজনীতি ও বিচারহীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

    সাভারে শিক্ষক হত্যা ও নড়াইলে অধ্যক্ষকে হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশে বক্তারা সারাদেশে শিক্ষক নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা এবং হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

    জগন্নাথ হলের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা বলেন, “আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি। কিন্তু আমি কতটা নিরাপদ জানি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও নিরাপত্তার কথা ভাবছি। কারণ আমি সনাতন ধর্মের অনুসারী।

    এদিকে নড়াইল ও সাভারের ঘটনার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছে সংগঠনটি।

    মন্তব্য করুন