• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ।বছরের শুরুতেই তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র।

    রাষ্ট্রপতি পদে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি আগ্রহী নয়। প্রার্থীর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন বলে আশা করছে জাতীয় পার্টি। তারা এই পদে আমলা চান না।
    রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি থাকার সুযোগ না থাকায় তার জায়গায় নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আবদুল হামিদ ২৪ এপ্রিল ২০১৩-এ দেশের ২০ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। ২৪ এপ্রিল, ২০১৮-এ, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ২১ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবেন।
    সংবিধানে রাষ্ট্রপতির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিস্তারিত ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন বৈঠক করবে। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা ও কথা বলবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর তফসিল ঘোষণা করা হবে।
    রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে সংসদ সদস্য হতে হবে এমন নয়। তবে সংসদ সদস্যদের একজন হতে হবে প্রস্তাবক এবং একজন সমর্থক। সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকেন।
    ক্ষমতাসীন দল তাদের বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৫০ আসনের মধ্যে ৩০২টি আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টি ২৬, ওয়ার্কার্স পার্টি ৪, জাসদের ২, বিকল্পধারা ২, গণফোরাম ২, তরিকত ফেডারেশন ১, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১ ও স্বতন্ত্র ৩ আসন। সাত সদস্য পদত্যাগ করায় সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ওই সাতটি আসনে উপনির্বাচন চলছে।
    আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের আলোচনা নেই। জাতীয় পার্টি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, গণফোরাম বা স্বতন্ত্র কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
    আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে। অবশ্যই একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে ড. আবদুর রাজ্জাক আশা করেন, নতুন রাষ্ট্রপতি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করা যেতে পারে।
    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি এই সরকারের কোনো নির্বাচনে আগ্রহী নয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে জাতির কোনো সম্পর্ক নেই। আর বর্তমান রাষ্ট্রপতির মতো সংকট কাটিয়ে উঠতে নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই বিএনপির। বিএনপি এখন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অবৈধ সরকারের পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের এটাই একমাত্র পথ।
    জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকলে এবং গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিলে জাতীয় পার্টি সমর্থন দেবে। তবে এর আগে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি পদে আমলা চাই না। কারণ, একজন রাজনীতিবিদ রাষ্ট্রপতি হলে তিনি রাজনীতির ভাষা বুঝতে পারবেন।
    রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তাদের আপত্তির কথা স্পষ্ট করেছে। তারা নির্বাচনকালীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছেন।
    আওয়ামী লীগ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। এর বাইরে যাওয়া অসম্ভব।

    মন্তব্য করুন