• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    কেরানীগঞ্জ।সন্ধ্যা হলেই ডাকাতের ভয়

    ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগেই ডানদিকের গ্রামীণ সড়ক ধরে হাঁটুন। একটি মোটরসাইকেলে কিছুদূর যাওয়ার পর একটি দোকানের সামনে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখে সৌদি প্রবাসী নওয়াজ আলীর বাড়ির খোঁজ কর হলো। সেটা দেখানোর আগে মানুষ উল্টো জানতে চেয়েছে, বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে? ইঙ্গিত হ্যাঁ উত্তর দিতেই এক কিশোর তাকে বাড়ির দিকে নিয়ে যায়। গ্রাম্য পাকা রাস্তার তিনটে বাড়ি পেরিয়ে সবুজ ঘাসে ভরা মাঠের পাশে নেওয়াজ আলীর বাড়ি। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। দুপুরের দিকে একতলা বাড়ির চারপাশে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছিল, প্রধান গেটে বড় বড় তালা ঝুলছিল, জানালা বন্ধ ছিল।

    প্রতিবেশীরা জানান, ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে লুটপাট করে আতঙ্কিত অবস্থায় নওয়াজ আলীর স্ত্রী রাবিয়া বেগম তার দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। গত ৩০ এপ্রিল একদল মুখোশধারী ডাকাত রাবেয়া ও তার দুই সন্তান সাজ্জাদ ও সোহাগকে একই বাড়িতে পিটিয়ে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ অন্তত ছয় লাখ টাকা লুট করে। নেওয়াজ আলী ও তার অপর দুই ছেলে রাজু ও নাহিদ সৌদিতে থাকেন।

    লুটপাটের পর নওয়াজ আলীর পরিবার ডাকাতদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেও একই থানার দক্ষিণ মালিভিটা এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় ধৃত শাহজালাল মাতাব্বরের পরিবারও আতঙ্কে নিয়েই বাড়িতে থাকেন। তবে শুক্রবার বাড়িতে গিয়ে অপরিচিত একজনকে দেখে দরজা খোলেনি। সে জানালাও বন্ধ করে দিল! অবশেষে নিজের পরিচয় দিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে শাহজালালের স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের আতঙ্কের কারণ। গত ৯ এপ্রিল ওই বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। তারা কিছু নিতে না পারলেও হামলায় পরিবারের সবাই গুরুতর আহত হয়।

    শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, গত ৯ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ দিনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় সাতটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ মে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার নিউ সোনাকান্দা এলাকায় একটি বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করা হয় দম্পতিকে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে। এর আগে গত ১ মার্চ কেরানীগঞ্জের দাড়িগাঁও বটতলী এলাকায়, বড় বস্তা এলাকা ও পুরাতন শাহাপুর এলাকায় পৃথক তিনটি বাড়িতে ডাকাতরা হামলা চালায়।

    দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বলেন, থানায় যোগদানের আগে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মামলাগুলো ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। তবে ডাকাতি প্রতিরোধে টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি নিজে রাতের টহলে রয়েছেন। অপরাধ প্রতিরোধেও নেওয়া হয়েছে নানা কার্যক্রম।

    কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খালেদুর রহমানও কয়েকদিন আগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বলেন, ডাকাতির রহস্য উদঘাটনের কাজ চলছে। ডাকাতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

    এমন পরিস্থিতিতে ডাকাতি ঠেকাতে এলাকার লোকজন লাঠি-বাঁশি নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তায় পাহারা দিচ্ছেন। বাড়ির লোকজন রাতে না ঘুমিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে সদর দরজায় বসে আছে। বিত্তবান পরিবারগুলোও টাকা দিয়ে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করেছে।

    গত ২৪ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঘোষকান্দা পূর্বপাড়া এলাকায় প্রবাসী ইসলাম মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার মালামাল লুট করে। একই রাতে আরেক প্রবাসী সানাউল্লাহ মুন্সীর বাড়িতে অভিযান চালায় একদল ডাকাত। এরপর থেকে ওই দুই পরিবার ছাড়াও প্রতিবেশীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুরুতে এলাকাবাসী পুরো এলাকায় পাহারা বসায়। এখন এলাকার লোকজন টাকা নিয়ে আব্দুর রশিদ ও মিছির আলী নামে দুই নিরাপত্তারক্ষীকে রেখেছেন।

    মন্তব্য করুন