কেএসআরএম’র ২৩১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন
কেএসআরএম স্টিল প্লান্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির হদিস মিলেছে।প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস ।গোপন সূত্রে জানা গেছে, কেএসআরএম দীর্ঘদিন ধরে সঠিকভাবে ভ্যাট দিচ্ছে না। সংস্থাটি নিয়মিত কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে।
এ অভিযোগ আমলে নিয়ে কাস্টম এক্সইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনারের নির্দেশে একটি দল চলতি বছরের গত ২২ জুন প্রতিষ্ঠানটিতে তল্লাশি পরিচালনা করে। এ সময় তারা কর প্রদান করেছে কিনা সে সংক্রান্ত দলিল এবং দুইটি সিপিইউ জব্দ করে। জব্দকৃত দলিলগুলো যাছাই করে দেখা যায় যে সংস্থাটি প্রচুর পরিমাণে মূসক ফাঁকি দিয়েছে। কেএসআরএম জুলাই ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন পণ্য সরবরাহ করে, অন্যদিকে ভ্যাট পরিশোধ করতে সর্বমোট ১৮ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪ টাকা দেয়ার কথা ছিল। তবে সংস্থাটি ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা দেয়নি। ফলস্বরূপ, সরকারের পাওনা দাঁড়ায় ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা ।
অন্যদিকে কেএসআরএম স্টিল লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি একটি উৎসে মূসক কর্তনকারী সত্ত্বা। কাঁচামাল ক্রয় সহ সকল ক্রয়ের বিপরীতে বিধি অনুসারে ভ্যাট ছাড়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের রিটার্নগুলিতে জানুয়ারী ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত সমস্ত ক্রয়ের বিপরীতে উৎস থেকে ভ্যাট ছাড়ের কোনও দলিল দেখায়নি। এই সময়ে, ১৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮৮৭ দশমিক মেট্রিক টন কাঁচামাল ক্রয় করা হয়েছিল; যার বিপরীতে উৎসে ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। এই পুরো ভ্যাটের পরিমাণ অপরিশোধিত রয়েঝে বলে জানা গেছে।
সরবরাহের বিপরীতে অপরিশোধিত ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা এবং উৎসে ভ্যাটের বাবদ অপরিশোধিত ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮৮৪ টাকা , অর্থাত্ মোট ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকার ফাঁকির তথ্য তদন্তে বেরিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্যাট কমিশনারেটে, চট্টগ্রাম কমিশনার মোহাম্মদ আকরব হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কেএসআরএম যথাযথভাবে ভ্যাট পরিশোধ করছে না। এবং আমি গোপনীয় সংবাদ পেয়েছি যে নিয়মিত ভ্যাট দেওয়া হচ্ছে না। সেই সূত্র ধরেই, নিয়ম অনুসারে, আমাদের নিবারক দলের মাধ্যমে তল্লাশি এবং তদন্তে বিশাল ফাঁকি বের হয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে শিগগিরই কারণ দর্শনের নোটিশ জারি করা হবে। তারা তাদের কথা বলার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে ফাঁকিকৃত রাজস্বের সমান পরিমাণ এবং প্রযোজ্য সুদের সমান পরিমাণ দিতে হবে। ফাঁকিকৃত অর্থ তাদের কোষাগারে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও ধরণের শৈথল্য প্রদর্শন করা হবে না।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম ভ্যাট এ জাতীয় বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে।
কমিশনার আরও বলেন, যারা সরাসরি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযান অব্যাহত থাকবে।