কেএসআরএম’র চুরি হওয়া জাহাজ কেনা, বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ
চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্প গ্রুপ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (কেএসআরএম) সীতাকুণ্ড ভাটিয়ারি এলাকার শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে এমটি মেডান নামে একটি জাহাজ সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌ পুলিশ জব্দ করেছে।
জাহাজটি মূলত সিঙ্গাপুরের দিয়া মেরিন (প্রাইভেট) লিমিটেডের মালিকানাধীন ছিল। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর আইনী সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ৮২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জাহাজটি ক্রয় করেছেন কুক দ্বীপের পতাকাতে নিবন্ধিত ৯০০২২০৭ নং আইএমও অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামের মালয়েশিয়ার একটি সংস্থা।
যাদের রেজিষ্ট্রেশন নং এলএল ১৪৫১৪। আইনগতভাবে সকল প্রক্রিয়া শেষে সংস্হাটি যায়া মেরিন (প্রা:) লিমিটেড এর সিঙ্গাপুরের আরএইচবি ব্যাংকের ০০০০১৭৬১১০২৫১২০০ অ্যাকাউন্টে আরএইচবি মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর শাখা থেকে ২০ লাখ মার্কিন ডলার স্হানান্তরিত ককরা হয়েছে অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
শর্তাবলী অনুযায়ী, এটি একই মাসের ১৫ই নভেম্বর মালয়েশিয়ার লিংগি বন্দরে শিপিং সংস্থার কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। তবে সংস্থাটি অর্থ প্রদান করে প্রতারণার শিকার হয়।
অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ডন লয়েড বাদি হয়ে সিঙ্গাপুর পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেছেন। আন্তর্জাতিক মামলা নং orin / medan / 210521. মামলার সমস্ত কপি প্রতিবেদকের হাতে আসার পর পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর ২০ লাখ মার্কিন ডলার টাকা মেরে দিতে,সিঙ্গাপুরে ইউএন-নিবন্ধিত সংস্থা ডায়া মেরিন (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং পানামা সিটির পানামানিয়ান কর্পোরেশন দয়ানুয়ান হোল্ডিংস কর্পোরেশন । এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। জাহাজটি স্ক্র্যাপিংয়ের জন্য বাংলাদেশের শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের কাছে হস্তান্তর করে।
M.T.MEDAN জাহাজটির নাম পরিবর্তন করে তার নাম করণ করেন M.T.MED, এবং কেএসআরএম জাল দলিল তৈরি করে জাহাজটি বাংলাদেশে নিয়ে আসে। চলতি বছরের ২০ জুন মেসার্স.কবির স্টিল লিমিটেড জাহাজটিকে স্ক্র্যাপ করার জন্য অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের মার্কেন্টাইল মেরিন অফিসে আবেদন করেছিল। একই দিনে, মার্চেন্টাইল মেরিন অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার ১৮.১৭.১৫০০.১০৫.৯৯.০০৩.২১ নং স্বারক সংক্রান্ত বিচিং অনুমতি দিয়েছেন। এর আগে, ১৬ই জুন, শিল্প মন্ত্রণালয় ৩৬.০০.০০০০.০৬১.১২২.২১-৪৭৮ নং স্বারকে জাহাজটিকে সমুদ্রে যেতে অনুমতি দেয়।
অবৈধভাবে কেএসআরএমের কাছে জাহাজটি প্রদানের জন্য ১৬ই নভেম্বর অরিন এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে জাহাজ মেরামত এবং ক্রু পরিবর্তনের জন্য ইন্দোনেশিয়ার একটি বন্দরে অবস্হান করার মিথ্যা তথ্য দেয় ডায়া মেরিন (প্রাইভেট) লিমিটেড।এদিকে আফ্রিকার পোলাও গিয়ে এমটি মেডান জাহাজটি অবৈধভাবে পানামার দায়ান হোল্ডিংস লিমিটেডের মালিকানা পরিবর্তন করে কেএসআরএম কে স্থানান্তর করা হয়। সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন সেন্টারের মামলায়ও পানামার দায়ান হোল্ডিংস লিমিটেডকেও অভিযুক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কেএসআরএম বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন ও নষ্ট করার জন্য চুরি হওয়া জাহাজগুলি বাংলাদেশে এনে এবং দেশ থেকে শিপিংয়ের ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য আন্তর্জাতিক চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।
কেএসআরএম গ্রুপের দায়া মেরিনের জাহাজ সম্পর্কে তথ্য গোপন করার কারণে দেশের ভাবর্মর্তি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
৩০ শে জুন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের ৪৪৪২ নং স্বারক মূলে এমটি মেডান জাহাজটির অবস্হান ও জাহাজটিকে আটক করার জন্য আদালত নৌ পুলিশকে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার কাজী আরাফাত উদ্দিনকে জাহাজের ব্যবস্থা গ্রহণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৪ জুলাই, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার নৌ পুলিশ পুলিশ স্বারক নং ২০২১/১8৭৫নং এর ভিত্তিতে চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।
গত ৯ই জুলাই, জাহাজটির অবস্থান নিশ্চিত করার পরে নৌ পুলিশের একটি দল সীতাকুণ্ড এলাকার কেএসআরএমের খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে এমটি মেডান জাহাজটি জব্দ করে। ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে গ্রাম পুলিশ এই জাহাজটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের মতে, এমটি মেডান জাহাজটি গত ৩ জুন বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছেছিল, মার্চেন্টাইল মেরিন অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন ২০ শে জুন জাহাজটি স্ক্রাপিং দেওয়ার জন্য বিচিংকে অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তা বাতিল করে দেন। এবং শিপিং মাস্টারকে কেএসআরএমের জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে একটি চিঠিও দেন। চিঠিতে তিনি অনাপত্তি সনদ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলেন। এমনকি তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে অবৈধ জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করায় বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।
নৌ-পুলিশ চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, “আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পরে আমরা কেএসআরএমের খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে ৯ জুলাই জাহাজটি আটক করে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের জিম্নায় দেয়া হয়েছে। এবং কেএসআরএমকে আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাহাজের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম। বলেন আমরা যে জাহাজটি কিনেছিলাম সেটি M.T.MED জাহাজ, মামলা আদালতে বিচারাধীন M.T.MEDAN জাহাজ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি। M.T.MED জাহাজটির মালিক কে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেএসআরএম জাহাজটি কিনেছে, এমন প্রশ্নে তিনি কোন তথ দেয়নি।তবে স্বিকার করেছে যে দায়া মেরিন (প্রা:)লিমিটেড থেকে কেএসআরএম কোন জাহাজ কিনেনি।
এছাড়া মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস যে বিচিং অনুমতি দিয়েছে সে অনুমতি এখনও বহাল রয়েছে এটি বাতিল হয়নি।
তবে সাময়িক স্হগিত করেছে বলে তিনি স্বিকার করেন।