জাতীয়

কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার।ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন করা হয়নি, তবে…

বাংলাদেশে নিযুক্ত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা পেতেন। সরকার সেই নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেয়। এর ব্যাখ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু যাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন কিনা- সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৬১ সালে বিভিন্ন দেশ দ্বারা স্বাক্ষরিত ভিয়েনা সনদে বলা হয়েছে যে আয়োজক দেশকে অবশ্যই সমস্ত কূটনৈতিক মিশন এবং কূটনীতিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কূটনীতিকরা বলেছেন যে এটি আয়োজক দেশের উপর নির্ভর করে যে তারা কীভাবে তার নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। ভিয়েনা চার্টার কিভাবে আয়োজক দেশগুলিকে নিরাপত্তা প্রদান করবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রদান করে না।

যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক রাষ্ট্রদূত এম.হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতের বাড়ির সামনে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয় না। দেশগুলো তাদের নিজস্ব উপায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তবে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দুটি দিক রয়েছে। একটি হল বাস্তবতা এবং আপাত নিরাপত্তা; আরেকটি হল যে ব্যক্তি সুরক্ষিত আছে সে নিরাপদ বোধ করছে কিনা। যখন এই দুটি জিনিস একত্রিত হয়, তখন বলা যেতে পারে যে নিরাপত্তা কার্যকর করা হয়েছে। সুরক্ষিত ব্যক্তি যদি নিরাপদ বোধ না করেন, তাহলে নিরাপত্তা কার্যকর বলা যাবে না।

সাবেক কূটনীতিকরা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতদের বাসভবনে গাড়ির সামনে পুলিশ গার্ড ও এসকর্ট সুবিধা থাকে না। কোনো রাষ্ট্রদূত চাইলে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে ওইসব দেশে এই সুবিধা নিতে পারেন। তবে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকার দেশগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতদের বাসস্থান এবং তাদের চলাচলের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরব ও জাপানের রাষ্ট্রদূতদের সড়কে যাতায়াতের সময় সামনে ও পেছনে অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। এরপর ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ১ জুলাই, ২০১৬, হলি আর্টিজান হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন। এরপর থেকে জাপানি রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তবে কেন এবং কবে থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও সৌদি আরবকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কারণ ও সময় জানাতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাষ্ট্রদূতরা টাকা দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা পেতে পারেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হলেও তারা চাইলে আবারও দেওয়া হবে। তবে এর জন্য তাদের মূল্য দিতে হবে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, “দেশে যখন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল, তখন আমরা চারটি দূতাবাসকে রুট প্রটেকশন দিতাম। এটা আমাদের লিখিতভাবে দেওয়া হয়নি বা তারা অনুরোধ করেনি। আমরা তাদের দিয়েছি; তাই। তারা যাতে সমস্যায় না পড়ে।আমরা এই চারজনের বাইরে কাউকে সুরক্ষা দেইনি।আমাদের মনে হয় সেই পরিস্থিতি আর নেই।সেই কারণে আমরা এই রুট সুরক্ষা সরিয়ে দিয়েছি।’ এ ধরনের নিরাপত্তা সুবিধার জন্য কোনো দূতাবাস আবেদন করেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু জানিয়েছি।’ এখন কার কী দরকার তা জানাবেন।

আনসার বাহিনী কীভাবে নিরাপত্তা দেবে তা চূড়ান্ত হয়েছে: পররাষ্ট্র সচিব

আনসার বাহিনী কীভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেবে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, দু-একদিনের মধ্যে কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি দূতাবাসগুলোকে জানানো হবে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক বলেন, “আনসার বাহিনী কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত। আর্থিক বিষয়গুলো আলোচনা করে ঠিক করা হবে।