কুবি ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিভ্রান্তি, শোডাউনে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা
শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় নিজের ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত ফেসবুকে চিঠিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঘোষণা করে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লেখক ও ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে কুবি কমিটি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি মুছে ফেলা হয়। তবে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জয়ের ফেসবুক ওয়ালে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল।
এ ঘটনার পর কুবি ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। দুই ধরনের তথ্য দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখিকা কমিটি বিলুপ্ত না হলেও অন্য একটি অংশ সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কুবি ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বও সামনে এসেছে। শনিবার ছাত্রলীগের একাংশ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থীরা জানান, কুবি ছাত্রলীগ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন রেজা-ই-এলাহী, ২০১৫ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল হাসান সাদীসহ একাধিক অনুসারী রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন কারণে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এখন ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাস করছেন।
অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
শাখার সভাপতি ইলিয়াস হোসেন কমিটি বিলুপ্তির বিষয়ে বলেন, তিনিও প্রথমে সত্য বলে মনে করেছিলেন। তবে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়নি বলে লেখকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় সভাপতি ফোন না নিলেও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
তবে প্রতিপক্ষ রেজা-ই-এলাহীর দাবি, কুবি শাখার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারা।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদও দুই ধরনের তথ্য দিয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এই পর্যন্ত আমরা সব জানি. এরপর আর কোন আপডেট পাইনি। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে কিনা জানি না। তবে উপসংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ফাহিম হাসান লিমন জানান, সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি আসবে। এর জন্য আগেরটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সভাপতি জয় ফোন না ধরলেও সাধারণ সম্পাদক লেখক বলেন, কমিটি বিলুপ্ত হয়নি। সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। তারিখ ঠিক হলে জানানো হবে।
এদিকে কমিটি নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগের একটি দল ৪০ থেকে ৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং শোডাউন করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজার অনুসারীরা শোডাউন করে। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে গিয়ে ককটেল ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে এবং ইলিয়াসের অনুসারীদের হল ত্যাগ করতে বলে। এ সময় তারা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ও রেজা-ই-ইলাহীর পক্ষে স্লোগান দেন। প্রায় ২০ মিনিট ক্যাম্পাসে অবস্থানের পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ অন্য শিক্ষকরা অনুরোধ করলে চলে যান।
পরে ইলিয়াসের অনুসারীরা রামদা, হকি স্টিক, লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বের হয়। এ সময় ক্যাম্পাস ও প্রধান ফটক বন্ধ থাকলেও বহিরাগতরা কীভাবে ক্যাম্পাসে শোডাউন করে তা জানিয়ে প্রক্টরের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
ওই গ্রুপে তিন-চারজন সাবেক ও একজন বর্তমান শিক্ষার্থী ছিল বলে দাবি করেন কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস। বাকিরা বহিরাগত।