শিক্ষা

কিন্ডারগার্টেনের দুর্ভাগ্য।দেশজুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে, বেহাল বাকীগুলোও

মোঃ নিজাম উদ্দিন ২০০৩ সালে রাজধানীর আদাবরে ‘আঞ্জুমান আবাসিক মডেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিছু দিনের মধ্যেই সংস্থাটি ওই এলাকায় ভাল সাড়া ফেলে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী বাড়তে থাকে। এক সময় নিজাম উদ্দিন গাবতলী এলাকায় একই সংস্থার আরেকটি শাখা খুলেন। দুটি শাখায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। এ বছর করোনার কারণে, সারা দেশে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ ছিল। একই সময়ে নিজাম উদ্দিনের স্কুলও বন্ধ ছিল। এখনও বন্ধ। তবে এই বন্ধ এবং অন্যান্য বন্ধের মধ্যে পার্থক্য হ’ল টিউশন ফি আদায় না করায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তিনি। ভাড়া দিতে না পারায় নিজাম উদ্দিন বিদ্যালয়ের গাবতলী শাখা বন্ধ করে দেন। নিজের বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে তিনি তিন মাস আগে পরিবারের সাথে আদাবরে চলে আসেন। এখন তিনি স্কুল বিল্ডিংয়ের ভাড়াও দিতে না পেড় এটি বিক্রয়ের জন্য  ক্রেতার সন্ধান করছেন।

নিজাম উদ্দিনের অনুরূপ আর একটি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ খান থানার দক্ষিণপাড়ায় (নদ্দাপাড়া) এসএফ মডেল স্কুল। প্রতিষ্ঠাতা রকিবুল ইসলাম চার শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে রকিবুল গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সাভারের বাইপাসে অবস্থিত শ্রুতি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজও বন্ধ । এর প্রতিষ্ঠাতা শামীম ইকবাল দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন।ভাড়া প্রদানের অক্ষমতার কারণে রাজধানীর মাটিকাটা এলাকার আদর্শ পাবলিক স্কুলটি গত আগস্টে বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ আগের বিল্ডিংয়ের পাশের ‘সাউথ ভিলা’ নামে অন্য একটি ভবনে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এই মাসে স্বল্প পরিসরে স্কুলটি আবার চালু করে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নার্গিস আক্তার বলেন তাঁর তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মার্চ মাস থেকে স্কুল একটি পয়সাও অর্জন করতে পারেনি। যাইহোক, বাড়ি ভাড়া এবং কর্মীদের বেতন এর জন্য ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই এটি আগস্টে বন্ধ হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বিক্রি করার চেষ্টা করেও ক্রেতা খুঁজে পেলাম না। এই স্কুলগুলির মতো, মহাদুরদিন করোনার সময়কালে সারা দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নেমে এসেছে। দেখা গেছে যে সম্পূর্ণ বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যালয়ের মালিকদের কেউই ক্ষতিতে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করতে চান না। যে কারণে ইতিমধ্যে দেড় হাজার স্কুল বন্ধ রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের বাকী স্কুলগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। কয়েক মাস ধরেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পাচ্ছেন না। বাড়িভাড়ার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা বাকি রয়েছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ইউনিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী  বলেন, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীরা আক্ষরিক অর্থে না খেয়ে, চরম অমানবিক জীবন যাপন করছেন। দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ এবং তাদের পরিবার কিন্ডারগার্টেনের সাথে যুক্ত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কেবল শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখছে না, পাশাপাশি দেশে বেকারত্ব হ্রাসেও বিশাল অবদান রাখছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফির উপর নির্ভরশীল ।এই পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় মার্চ মাস থেকে কোনও টিউশন ফি আদায় করা হয়নি, সুতরাং সব ধরণের বিল, বাড়ি ভাড়া, বেতন-ভাতা প্রদান করা সম্ভব হয় না। বাড়িওয়ালা ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং দরিদ্র কর্মচারীরা আর্থিক সমস্যার কারণে দু: খিত জীবন যাপন করছেন।

এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, শিক্ষাব্রতী সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও মর্যাদা পেয়েছে। শিক্ষকরা তাদের সামাজিক অবস্থানের কারণে কারও কাছে পৌঁছতে পারে না। এমনকি লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাওণ গ্রহন করতে পারে না। বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতিতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে তারা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম মেনে চলার শর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন