জাতীয়

কাশিমপুর কারাগারে একযোগে হামলার পরিকল্পনা কষেছিল জঙ্গিরা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার নব্য জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়ার দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কাশিমপুর কারাগারে একযোগে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে উগ্রবাদীদের বের করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এই নতুন জঙ্গি সদস্যরা।
সোমবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাবের অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান মাসুদ ওরফে রণবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের মোবাইল ফোন থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ভিডিও জব্দ করা হয়।
এই ভিডিও সম্পর্কে র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই ছোট ভিডিওগুলো তিন-চার মাস আগে করা হয়েছে। অস্ত্রসহ এসব ভিডিও প্রকাশ করে বড় আকারের হামলা চালিয়ে ‘দায় স্বীকার করার’ পরিকল্পনা ছিল তাদের। বিশেষ করে কাশিমপুর কারাগারে যুগপৎ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে চরমপন্থীদের হটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা। অস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিওগুলির বেশিরভাগই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সামরিক প্রশিক্ষক রণবীরের ডিভাইসে পাওয়া গেছে। ভিডিওতে ৩০-৩৫ জন যুবককে দেখা যাচ্ছে। গৃহহীন যুবকদের নিখোঁজ তালিকা যেটি প্রকাশিত হয়েছিল তা সামরিক প্রশিক্ষণ ভিডিওতেও দেখানো হয়েছিল। ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- সালেহ আহমেদ, নিজাম উদ্দিন ও আবুল বাশার মৃধা।
মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রণবীর প্রথম জীবনে একজন ‘ডাকাত’ ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি আরেক জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষ নেতাদের সংস্পর্শে আসেন এবং তিনিও চরমপন্থায় জড়িয়ে পড়েন। তার বাড়ি সিলেটে। ২০০৭ সালের আগে তিনি ডাক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতেন। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। ২০০৭-এর পর সেই মামলায় রণবীর একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। জামিনে মুক্ত হয়ে জেএমবির হয়ে কাজ শুরু করেন।
জেলে থাকা জেএমবি সদস্যদের পরিবারের দেখভাল করতেন তিনি। তিনি কারাবন্দি জেএমবি সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। রণবীর মোশাররফ হোসেন ওরফে রাকিবের সাথে দেখা করেন, জামাতুল আনসারের বর্তমান শুরা সদস্য এবং ২০১৭ সালে অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান। তিনি রাকিবের মাধ্যমে জামাতুল আনসারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে যোগদান করেন।
কমান্ডার মইন আরও জানান, সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের আমন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি সামরিক শাখার সদস্য বাছাই করতেন রণবীর। শুরু থেকেই তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। সংগঠনের আমীরের নির্দেশনায় তিনি কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরা কমিটির সভা-সমাবেশ করেন। ২০২১ সালে, জামাতুল আনসারের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী দল কেএনএফ বা বোম পার্টির সাথে চুক্তিতে পৌঁছেছিল, রণবীর সহ সংগঠনের আমির এবং অন্যান্য শুরা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ অপরাধীরা জেলে যাওয়ার পর জঙ্গিবাদে যোগ দেওয়ার ঘটনাও বেশি রয়েছে। সেক্ষেত্রে কারাগারটি উগ্রপন্থীদের দীক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে কি না, কমান্ডার মইন বলেন, বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা ও কারা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন