• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    কালুরঘাট সেতু বন্ধ করে ফেরি চলাচল শুরু ।প্রথম দিনটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক

    কালুরঘাট ব্রিজ। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তা সত্ত্বেও এক লেনের ‘রেল-কাম-সড়ক’ সেতুটিতে প্রতিদিন এত বেশি যানবাহন চলাচল করে যে সেতুর দুই পাশে সর্বদাই যানজটের সৃষ্টি হয়। এবং ঝুঁকি আছে.

    ফলে বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ এখানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আজ কাল, সময় চলে যায়; কিন্তু সেতু আর নেই। নতুন সেতুর দাবির পক্ষে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল। তার মৃত্যুর পরও সেই দাবিতে কাজ করে যান আরেক সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমদ। তিনিও মারা গেলেন; কিন্তু নতুন সেতু হয়নি।

    নতুন কোনো সেতু না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল করতে হবে এই জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে। এ কারণে বড় ধরনের সংস্কার কাজ চলায় অন্তত তিন মাস সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রেখে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগ থেকে চরম দুর্ভোগে গেছে। প্রথম দিনে নদী পার হওয়া খুবই কষ্টকর ছিল।

    মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কালুরঘাট ব্রিজের পাশে নদী পার হয়ে ফেরি চলাচল শুরু হয়। তিনটি ফেরির মধ্যে দুটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে, একটি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। কিন্তু প্রথম দিনেই ফেরি চলে। আবার বিকেলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় নদীর দুই পাড়ের ফেরির বেইলি ব্রিজ। এতে ভোগান্তি বাড়ে। ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করায় অনেক অটোরিকশা বিকল হয়ে যায়। সেতুর দুই পাশে যানজটও ভয়াবহ। হাজার হাজার মানুষ আটকে পড়ে। অনেককেই পায়ে হেঁটে সেতু পার হতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

    দুপুরে এক গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সেতু পার হতে দেখা যায়। ওই নারীর বাবা বোয়ালখালীর চরনদ্বীপের আলতাফ হোসেন বলেন, মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা।

    তাকে অপারেশনের জন্য শহরে নিয়ে যেতে হবে।

    কিন্তু কালুরঘাটে এসে বিপদে পড়লাম।

    মেয়েকে নিয়ে ব্রিজ পার হতে বাধ্য।

    বোয়ালখালীর বেঙ্গুড়া গ্রামের হাসান মুরাদ মামুন বলেন, “কালুরঘাট সেতু পার হওয়ার আগে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। কিন্তু এখন ফেরি করে যাতায়াত করা সেই দুর্ভোগকে অতিক্রম করেছে। করার কিছু নেই, আমরা অসহায়।

    নতুন সেতুর দাবিতে আন্দোলনকারী ‘বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক আবদুল মমিনের কথায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, দেশের অনেক নদীতে সেতু ছিল না, সেতু করা হয়েছে। কর্ণফুলীতেও একটি সেতু রয়েছে। তবে ফেরি চালু করতে হয়েছে। এতে বোঝা যায়, দেশ এগিয়ে গেলেও আমরা পিছিয়ে পড়েছি। নতুন সেতু কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, “এক লেনের সেতুতে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। হাজার হাজার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখন ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় সেই দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তার মতে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান একটি নতুন সেতু নির্মাণ হয়।

    অক্টোবরের শেষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু করতে কালুরঘাট রেলসেতু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। এ জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। সংস্কারের সময় যানবাহন ফেরি করে নদী পার হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের পরামর্শে সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। বিদ্যমান সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ১০ টন ওজনের ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। সেতু পার হওয়ার সময় সর্বোচ্চ গতিবেগ ১০ কিমি/ঘন্টা। তবে কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ওজন হবে প্রায় ১৫ টন এবং ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। এ কারণে সেতুটি সংস্কার করা প্রয়োজন।

    রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল করবে। এ জন্য সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কারের কাজ করা হবে যাতে অক্টোবরের মধ্যে ট্রেন চলাচল করতে পারে।

    ১৯৩১ সালে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি কোম্পানি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি একবার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। রেলওয়ে ২০০৪ এবং ২০১২ সালে দুইবার সেতুটির সংস্কার করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ।