কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা।নিরাপত্তাকর্মীর মন্তব্য একাই ছিলেন দিহান
সিসিটিভি ফুটেজে রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিন অর্ণাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ইফতেখার ফারদিন দিনানের বাড়ির সামনে তিনজনের সন্দেহজনক চলাচল দেখা গেছে। তবে তাদের ছবি পরিষ্কার নয়। তারা দিহানের বন্ধু বা পথচারী কিনা তা পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি।সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছিল যে অনুষ্কা প্রবেশের সময় ও প্রস্থানের সময় অনুসারে ঘটনার দিন দেড় ঘন্টা বাড়িতে ছিলেন। এই তথ্য তদন্তের সংশ্লিষ্ট উৎসগুলির সাথে মিলেছে। এদিকে, দিহানের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী দুলাল মিয়া পুলিশকে জানিয়েছেন যে, ঘটনার দিন (আনুশকা) একাই দিহানের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখেছিল। দেড় ঘন্টা পর দিহান আনুশকাকে একাই গাড়িতে তুলে নিল। সে সময় তিনি আর কাউকে দেখতে পাননি। ঘটনার পর থেকে দুলাল মিয়া পালিয় ছিলেন। গত রবিবার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি দাবি করেছেন যে মেয়েটি মারা গেছে শুনে তিনি ভয়ে পালিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার পুলিশ তাকে সাক্ষী হিসাবে আদালতে হাজির করলে তিনি সাক্ষ্য দেন। অভিযুক্ত দিহানের বরাত দিয়ে পুলিশ প্রথম থেকেই বলে আসছে যে দিহান একাই এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। ফুটেজে তিনজনের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে পুলিশ বলেছে যে তারা বিষয়টি আরও গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে। আনুশকার পরিবার সন্দেহ করে আসছে যে মেয়েটিকে যা অত্যাচার করা হয়েছে তা কেবল দিহানের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা গ্রেপ্তারের পরে মুক্তি পাওয়া দিহানের তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তারের দাবি করে আসছে। গত ৭ই জানুয়ারী, দিহান রাজধানীর কলাবাগানস্থ আনুশকাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে জোর করে তার সাথে যৌনমিলন করতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে মেয়েটি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দিহান ও তার তিন বন্ধুকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে। মৃত্যুর রাতে তার বাবা ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ দিহানের তিন বন্ধুকে ছেড়ে দেয়। তবে বাদী দাবি করেছেন যে তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কথায় অভিযুক্ত ছিল না। তবে ময়নাতদন্তের পরে দেখা যাচ্ছে যে একজন ব্যক্তির উপর এই নৃশংসতা একজন চালাইনি পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান জানান, বাদী আইনজীবী ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে থানায় এসে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি তাদের একজনকেই অভিযুক্ত করেন। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ, সাক্ষ্য ও তদন্তে এ পর্যন্ত জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে তদন্ত শেষ হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন এবং পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন। এই পরীক্ষাগুলি নিশ্চিত করতে পারে যে এক বা একাধিক দুষ্কৃতী মেয়েটির বিরুদ্ধে নির্মমতায় জড়িত ছিল। তা ছাড়া, প্রযুক্তিগত তদন্তে কারও অবস্থান স্পষ্টভাবে সনাক্ত করাও সম্ভব। এই পরীক্ষাগুলির প্রতিবেদন এবং প্রযুক্তিগত তদন্তের পরে যদি একাধিক অপরাধীর জড়িত সন্ধান পাওয়া যায় তবে তাদের চিহ্নিত করা যায়। ততক্ষণ তাকে অপেক্ষা করতে হবে। তদন্তের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, দিহানের বাড়িতে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। তবে আশেপাশের ভবন এবং রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আনুশকাকে ৭ ই জানুয়ারি দিহানের বাড়ির সিঁড়ির দিকে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল।দিহনের গাড়িটি দুপুর ১৩৬মিনিটে বাসা থেকে বের হতে দেখা গেছে। দুপুর ১ টার দিকে বাড়ির সামনে তিন ব্যক্তির রহস্যজনক গতিবিধির দৃশ্য দেখা যায়। পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবুল হাসান জানান, ঘটনার সময় দিহানের তিন বন্ধু লোকেশনে ছিল না। এজন্য তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তারা নজরদারির বাইরে নয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ এফ এম আসাদুজ্জামান জানান, দিহানের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী দুলাল মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও বিবৃতি দেওয়ার সময় দুলাল জানান, ঘটনার সকাল থেকেই তিনি দিহানের বাড়ির গেটে ডিউটিতে ছিলেন। সে জানত যে দিন দিহান ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। দুপুরের দিকে তিনি দেখতে পেলেন একটি মেয়ে দিহনের বাড়িতে যাচ্ছে। মেয়েটি (আনুশকা) ঘরে ঢোকার প্রায় দেড় ঘন্টা পরে দিহান তাকে অচেতন অবস্হায় বের করে আনেন। তারপরে সে তাকে গাড়িতে বসিয়ে তা চালিয়ে যান। গাড়ি নিয়ে বের হবার সময় দিহান ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।