• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ নজর

    দেশের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বছরের শুরুতে বেকারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও বছরের শেষে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে যে, দেশে বেকারের সংখ্যা এক বছরে ১,৭০,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২.৬৬ মিলিয়ন। এক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষের বেকারের সংখ্যা বেশি বেড়েছে।

    বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন হ্রাস। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে আমানতকারীরা কিছুটা লাভবান হলেও, ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সংকট দেখা দিয়েছে। উচ্চ সুদ প্রদানের পরেও ব্যাংকগুলি পর্যাপ্ত আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না, অন্যদিকে বেসরকারি খাত ঋণ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

    বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমশক্তির বর্তমান আকার ৫৯.১৮ মিলিয়ন। তবে, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এই সংখ্যা ছিল ৬১.১৫ মিলিয়ন। অর্থাৎ, এক বছরে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ১.৯৫ মিলিয়ন কমেছে। বর্তমানে ৫৬.৫২ মিলিয়ন মানুষ কর্মসংস্থান করছে, বাকিরা বেকার।

    প্রতি বছর, প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, যার মধ্যে ১৩-১৪ মিলিয়ন মানুষ দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান খুঁজে পায়। বাকিরা কাজের জন্য বিদেশে যায়। ফলস্বরূপ, দুই দশক ধরে বেকারের সংখ্যা সাধারণত ২৪-২৮ মিলিয়নের মধ্যে ওঠানামা করেছে।

    অর্থ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে যে, এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ২০২৫-২৬ বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা ৮ লক্ষ কোটি টাকার কম বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তবুও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বাজেটের আকার কিছুটা বাড়ানো হবে। সরকারি ব্যয় খুব বেশি কমানো হলে কর্মসংস্থান বাড়বে না, তাই ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে উদ্যোক্তারা সহজেই অর্থায়ন পেতে পারেন।

    জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট হবে। নতুন বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং ভাতার আওতা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে।

    অন্যদিকে, সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বেশ কয়েক দফা ভয়াবহ বন্যায় ফসলের ক্ষতির কারণে আউশ ও আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন টন কম হয়েছে। ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত সরকারের খাদ্যশস্যের মজুদ গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ কম ছিল। তাই, স্বাভাবিক মজুদ এবং সরবরাহ বজায় রাখার জন্য চলতি অর্থবছরে ৯০০,০০০ টন খাদ্যশস্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, স্থানীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করতে সারের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভর্তুকি অব্যাহত রয়েছে।

    চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতের জন্য ভর্তুকি ২১,০০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৮,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী বাজেটেও এই খাতের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। একই সাথে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৮,০৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওএমএস, টিসিবি এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সারা বছর ধরে চলমান রাখার জন্য, এই খাতের জন্য বর্ধিত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা পরবর্তী বাজেটেও অব্যাহত থাকবে।

    Do Follow: greenbanglaonline24