জাতীয়

ওয়াং ই ঢাকায়।চীন ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের সমর্থন চাইতে পারে

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ হবে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের সমর্থন চাইবে বেইজিং। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে জোর দেবে ঢাকা। ওয়াং ই শনিবার ঢাকায় আসেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চীন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়। তবে বাংলাদেশ যতটা সম্ভব চীনের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করবে। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) বা চার-দেশীয় জোট কোয়াড নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনে এমন ফোরাম বা জোটের সঙ্গে থাকবে, কিন্তু কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না। বিষয়টি ইতিমধ্যেই বেইজিংকে জানানো হয়েছে। ওয়াং ই কী বার্তা নিয়ে আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সম্পর্ক কীভাবে মজবুত করা যায় তার বার্তাই মিলবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে। এছাড়া দুই দেশের গৃহীত আগের সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করা হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো। চীন বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। একইভাবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বরাবরের মতোই বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে জোর দেবে ঢাকা। বিশেষ করে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে যাচাইকৃত ১,৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় ঢাকা। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চীনের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। চীনে করোনার কারণে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণাও আসতে পারে।

আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কৃষিমন্ত্রী ড. ওয়াং ই শনিবার বিকেলে কম্বোডিয়া থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। আব্দুর রাজ্জাক। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। এ সময় তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সেখানে ওয়াং ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনেও যোগ দেন। শনিবার রাতে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ দুপুরে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

দু’দেশের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর চীনের অর্থায়নে নির্মিত সেতু হস্তান্তর, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং টেলিভিশনে একে অপরের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বিষয়ে চুক্তি হবে।

মন্তব্য করুন