এ রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে।পরিবারের প্রত্যাশা
ঘটনার ১৮ মাস পর সোমবার ঘোষণা করবেন মেজর (অব.) সিনহা। রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়। বহুল আলোচিত মামলা হওয়ায় সবার দৃষ্টি থাকবে কক্সবাজারের দিকে। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। সিনহার স্বজনরা আশা করছেন তারা ন্যায়বিচার পাবেন। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।
গত ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ৩১ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেন। রায়ে প্রধান দুই আসামি বাহারছড়া তদন্ত ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের ভাগ্য নিয়ে অনেকেই আগ্রহী। মামলার বাদীও বিভিন্ন সময় তাদের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছেন।
সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, তিনি আশা করেন এই রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। অপরাধী যাই হোক না কেন; অপরাধ করলে কেউ আইনের আওতা থেকে রেহাই পাবে না- তা এই রায়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজকের রায়ের পর জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন শারমিন শাহরিয়ার। বিচারের জন্য যে কাউকেই আদালতে আসতে হবে।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমি সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছি ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। এখন আমি আদালতের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি সিনহার পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুরের এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। ‘লেটস গো’ নামের একটি ট্রাভেল ডকুমেন্টারি করতে প্রায় এক মাস কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় অবস্থান করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
সিনহা নিহত হওয়ার পর পুলিশের দাবি, ‘সিনহা তল্লাশিতে বাধা দিয়েছেন। সে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশ তাকে গুলি করে। এসব বিষয় উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সিনহার সহযোগী সিফাতকে একমাত্র আসামি করা হয়। ওই মামলায় সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর পুলিশ নীলিমা রিসোর্টে প্রবেশ করে যেখানে সিনহা অবস্থান করছিলেন এবং তার ভিডিও টিমের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে গ্রেপ্তার করে। নুরকে ছেড়ে দিয়ে শিপ্রা ও সিফাতকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
কক্সবাজারের ওই ঘটনার পরের পরিস্থিতি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে বর্ণনা করেন।
হত্যার ছয় দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট লিয়াকত-প্রদীপসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তের পর, র্যাব ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে একটি চার্জশিট জারি করে। ২৭ জুন, ২০২১ তারিখে, আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন। এরপর ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন ৬ দফায়।
এ মামলার প্রথম আসামি হলেন পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। অন্য আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী হলেন স্থানীয় নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ। নিহত হওয়ার আগে সিনহা সেই পাহাড়ে গিয়েছিলেন; নুরুল, নেজাম ও আয়াজ ওই গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া টেকনাফ পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেবও আসামির তালিকায় রয়েছেন। ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়াও ১৩ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন: মামলায় ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। তাঁর ভাষ্য, ‘ওসি প্রদীপ এই খুনের বিষয়ে অবগত নন। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে প্রদীপের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদী। বিচার না হলে উচ্চ আদালতে যাব। ‘
আসামির আরেক আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, আমরা আশা করি আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাব। রায় প্রত্যাশিত না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।