এসএল স্টিল শিপইয়ার্ডে শ্রম আইন না মেনে শ্রমিক ছাঁটাই
অর্থনৈতিক মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার অবস্থা শোচনীয়। শ্রমিকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। অনেক কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত শ্রমিকদের দুর্দশার পাশে দাঁড়িয়েছেন মালিকরা। কিন্তু উল্টো চিত্র সীতাকুণ্ডের মাদামবিবিরি হাট এলাকায় এসএল গ্রুপের মালিকানাধীন এসএল স্টিল শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে।
এই ইয়ার্ডে হঠাৎ পাঁচজন শ্রমিককে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা হয়েছে; তাদের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়নি। এই কোম্পানিতে শ্রম আইনের তোয়াক্কা করেননি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান।
ইউনুচ-কালামরা বছরের পর বছর যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছেন তা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবেননি। হঠাৎ মালিকের এমন আচরণে তারা বিভ্রান্ত। ব্যবসায় মন্দা এবং আগাম নোটিশের অভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি। তাদের চাকরি নেই বলে ইয়ার্ড থেকে বরখাস্ত করা হলেও তারা তাদের বকেয়া বেতনও দেয়নি। পরিবার নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এসব শ্রমিক।
জানা গেছে, ছাঁটাই করা পাঁচজন শ্রমিক এসএল স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাটার ফোরম্যান ও সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের অনেকেই ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তাদের জানানো হয়, নভেম্বর থেকে তাদের কোনো চাকরি নেই। এ বিষয়ে তাদের আগে জানানো হয়নি। ছাঁটাইয়ের কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। পরের মাসের বেতন নেয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় কেবল ।
শ্রমিকরা জানান, গতকাল রোববার পর্যন্ত তারা অক্টোবর মাসের বেতন পাননি। মাসের বেতনের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ না দিলে তারা মাসের বেতন গ্রহণ করবে না। গত শনিবার মালিকপক্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দিলে তারা অক্টোবর মাসের বেতন পরিশোধ করতে বলেন। গতকাল রোববার ডাকা হবে বলে জানানো হলেও তাদের ডাকা হয়নি।
শ্রমিকরা জানান, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। তবে ইয়ার্ড মালিক সমিতি এখনো বিএসবিআরএ বা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করেনি। মালিককে সময় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির সুরাহা না হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন তারা।
আইনের দিকে আঙুল তুলে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে অভিযোগ করে জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, আইন মেনেই শ্রমিক ছাঁটাই করা উচিত। কিন্তু মালিকপক্ষ আইনের তোয়াক্কা করেননি। শ্রম আইনেও বলা আছে কাজ না থাকলে কীভাবে ছাঁটাই হবে। এক মাসের নোটিশ আর চার মাসের বেতন। এক মাসের নোটিশ না দিলে আরও এক মাসের বেতন দিতে হবে। পুনর্নিয়োগ তাদের পূর্বের কর্মসংস্থানের উপর শর্তসাপেক্ষ; তারা রাজি হয়নি। যে শ্রমিকরা ঘাম ঝরিয়ে কোম্পানির জন্য কাজ করেছেন, তাদের বকেয়া বেতন দিতে হবে, তাও দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে তারা আমাদের চাকরিতে যেতে মানা করে দেয়। কোন পূর্ব নোটিশ দেওয়া হয়নি. নির্ধারিত বেতনের চেয়ে কম দিতেন। আমাদেরকে অন্য চাকরি খুঁজতে বলেননি; সেই সময়ও দেননি। এখানে এত বছর কাজ করলাম। আমাকে যদি বলত কয়েক মাসের বেতন দিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার নেব, এখন রাখতে পারব না। তাহলে আমি অন্তত আমার মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।
অপর এক শ্রমিক জানান, বর্তমানে তিনি ১৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। নভেম্বর থেকে ৯ হাজার টাকায় কাজ করতে বলে। তারা রাজি না হওয়ায় ২৪ অক্টোবর নভেম্বর থেকে পাঁচজন শ্রমিককে আসতে মানা করা হয়। ২৮ অক্টোবর ম্যানেজার চূড়ান্ত নোটিশ দেন।
গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান বলেন, “জানুয়ারি থেকে আমাদের কোনো জাহাজ কাটার কাজ নেই। তবে আমরা তাদের বসিয়ে আট মাসের বেতন দিয়েছি। এখন ৫০ হাজার ডলারের এলসি ব্যাংকে খোলা যায় না। আমরা কিভাবে ব্যবসা করব?তাই আমি তাদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হলাম।কিন্তু তারা আমাদের পুরোনো কর্মী হওয়ায় তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে।জাহাজ কাটার কাজ শুরু হলে আমরা তাদের আবার যোগ দিতে বলেছি।’