• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে হাতিরঝিল ক্ষতিগ্রস্ত হবে,এক যুগ আগে পরিকল্পনা

    হাতিরঝিলের মাটি ভরাট করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৪১টি পিয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। তেজগাঁও এফডিসি রেলগেট থেকে পলাশীমুখী ভায়াডাক্ট (উরাল রোড) পর্যন্ত র‌্যাম্পের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে লেকের পাড়ে খুঁটি নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণের পর লেকটি আবার খনন করা হবে। তবে এতে হাতিরঝিলেরও ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন নকশা সমন্বয়কারী এই বিশেষজ্ঞ।

    ২০০৮ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) হাতিরঝিল নির্মাণের কাজ শুরু করে। এই ৩০২ একর মনোরম হ্রদটি পরিত্যক্ত এবং নির্জন ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে হাতিরঝিল উদ্বোধন করেন। তবে দুই বছর আগে, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি, সরকার একটি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে একটি চুক্তি করে বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম সড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইন বরাবর একটি ফ্লাইওভার সড়ক নির্মাণের জন্য। কমলাপুর স্টেশন হয়ে। এটিই দেশের প্রথম পিপিপি প্রকল্প।

    এক শতাব্দী পর হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণে রাজউক আপত্তি জানালেও নকশাটি সমন্বয় করে প্রফেসর ড. সামছুল হক বলেন, বাংলাদেশে প্রকল্প নেওয়ার সময় ভবিষ্যৎ বিবেচনা করা হয় না। এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে হাতিরঝিলের দ্বন্দ্ব এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ২০১১ সালে এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনার সময় হাতিরঝিলের কথা ভাবা হয়নি।

    গত ৮ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সমন্বয় কমিটিকে রাজউক জানায়, এক্সপ্রেসওয়ের ৪১টি খুঁটির কারণে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত সেতু বিভাগের সভার নথি থেকে জানা যায়, রাজউকের সঙ্গে আলোচনা করে হাতিরঝিল এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের ৪০৭ থেকে ৪১৮ নম্বর পিয়ারের পাইল ড্রাইভিং কাজ শুরু করা হয়েছে।

    বিনিয়োগকারীদের সাথে চুক্তি অনুসারে, ১৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলের জন্য ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৭টি র‌্যাম্প থাকবে। হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে এফডিসি রেলগেট থেকে পান্থকুঞ্জ পার্ক, হাতিরপুল, কাঁটাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পলাশী পর্যন্ত দীর্ঘতম র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে জরিপ অনুসারে, ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে ১৮ শতাংশ এই র‌্যাম্প ব্যবহার করবে। র‌্যাম্পটি কারওয়ান বাজার থেকে পান্থকুঞ্জ পার্কের সার্ক ফোয়ারা এবং বাংলামটর মোড়ের মধ্যে মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) ভায়াডাক্টের নীচে যাবে। র‌্যাম্পের এক মুখ নেমে আসবে কারওয়ান বাজারে। অন্যটি পলাশী যাবে।

    হাতিরঝিলে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিজেএমইএ ভবন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভবন যেখানে ছিল সেখানে ভরাট করা হচ্ছে। গত শুক্রবার ইস্কাটনের বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে প্রায় ৫০ ফুট চওড়া বালু ভরাট হয়ে গেছে। লেকের মাঝখানে ভরাট করে উত্তর-দক্ষিণ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে পিয়ার নির্মাণে লেকের পাড়ে পাইলিংয়ে ‘রড বাইন্ডিং’ আনা হয়েছে।

    সেখানকার শ্রমিকরা জানান, পাইল ড্রাইভিং যন্ত্রপাতি লেকের পানিতে নামানোর কোনো উপায় নেই। তাই বালি ভরাট করা হয়। ভরাট জায়গায় পাইলিং করা হবে। পাইল ক্যাপের ওপরে পিয়ার তৈরি করা হবে। তার ওপর নির্মিত হবে ফ্লাইওভার। তবে, এক্সপ্রেসওয়ের মূল বিনিয়োগকারী ইতালীয়-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের (ইটাল-থাই) কোনো কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এএইচএমএস আক্তার জানান, রাজউকের সম্মতিতেই কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ শেষে লেকটি পুনঃখনন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।

    ইটাল-থাই, চীনা কোম্পানি শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল গ্রুপ এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন ১৩,৮৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ৬,৫২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় নির্মাণ কাজ ছয় বছর দেরিতে শুরু হয়। কোম্পানিগুলো এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২২ বছর ধরে টোল আদায় করবে। অর্থাৎ হানিফ ফ্লাইওভারের মতো এই রুটে গাড়ি চালাতে যত টাকা খরচ হবে।

    আগামী নির্বাচনের আগে বিমানবন্দর থেকে বনানী স্টেশন পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার অংশ খুলে দিতে চায় সরকার। দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার অংশ আগামী বছর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এফডিসি রেলগেট-পলাশী র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চার দফায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলেও মগবাজার রেলক্রসিং-কুতুবখালী সেকশনের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র।

    তেজগাঁও রেলগেট-মগবাজার সেকশনে বিদ্যমান রেললাইনের দুই পাশে পিয়ার নির্মাণে হাতিরঝিলের প্রায় ৩০ ফুট ভরাট করা হয়েছে।

    কর্তৃপক্ষ জানায়, জমিটি রেলওয়ের। রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে ওই সেকশনে ঢাকা-টঙ্গী ৩য় ও ৪র্থ রেললাইন নির্মাণ করা হবে।

    এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে অন্যান্য প্রকল্পের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।