জাতীয়

এলপিজির নির্ধারিত মূল্য কাগজেই , বাজারে নেই

জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। কিন্তু সেই দামে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। গত ৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ দাম ঘোষণা করা হয়। তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। স্থান ভেদে দাম ২০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। দু-এক জায়গায় ন্যায্যমূল্যে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি মাসের জন্য এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য ১২২৮ টাকা। তবে গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৩৫০ টাকায় কেনা হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলারদের কাছ থেকে যে দামে কেনা হয় তার সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। ব্যবসায় টিকে থাকতে দাম বেশি দিতে হয়। পাইকারি পর্যায়ে দাম কমাতে হবে। অন্যথায় নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করা সম্ভব নয়। উচ্চমূল্যের পাশাপাশি কম ওজনেরও অভিযোগ উঠেছে।

বিইআরসি বলছে, সারা দেশে বাজার তদারকি করার মতো জনবল তাদের নেই। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা অভিযান চালাতে পারে।

আদালতের নির্দেশে ১২ জানুয়ারি গণশুনানি শেষে ১২ এপ্রিল এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে আমদানি মূল্য বিবেচনায় কমিশন প্রতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করে আসছে। লোকসানের অজুহাতে বিক্রেতারা নিজেরাই এলপি গ্যাস বিক্রি করছিল। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সেপ্টেম্বরে নতুন করে গণশুনানি হয়। এরপর অক্টোবরে কমিশন এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে, যা প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। এতে ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা।

কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দাম বৃদ্ধির দিন (৩ ডিসেম্বর) পশ্চিম ধানমন্ডির বাসিন্দা জাহিদ দুটি খুচরা দোকানে তল্লাশি চালিয়ে একটি দোকানে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার পান যার দাম ১,২২০ টাকা এবং আরেকটি দোকানে ১,২৫০ টাকা। গত কয়েকদিনে ঢাকার মতিঝিল, মৌচাক, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাভেদে ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১২৩০ থেকে ১২৮০ টাকায়।

তবে কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল চলতি মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এখন আমাদের নির্ধারিত দামেই দেশের সব জায়গায় এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। তবে কোথাও থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

বিইআরসি সদস্য মকবুল ই ইলাহী বলেন, বাজার মনিটর করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন তারা। কারণ জনশক্তি কমিশনকে সারাদেশ পরিদর্শন করতে হয় না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিইআরসির ভূমিকা কাগজে কলমে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে গ্রাহকদের সঙ্গে কমিশনকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।

এলপিজি তৈরির প্রধান উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। সৌদি আরবের কোম্পানি আরামকো প্রতি মাসে এলপিজির এই দুটি উপাদানের দাম প্রকাশ করে। এটি সৌদি কার্গো প্রাইস (সিপি) নামে পরিচিত। সৌদি সিপির উপর ভিত্তি করে বিইআরসি দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে। বর্তমানে দেশে এলপিজি আমদানি, মজুদ ও বিতরণে একটি সরকারি কোম্পানিসহ ২৯টি কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, প্রতি সিলিন্ডারে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর হালিমা নগর এলাকার ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জানান, বসুন্ধরা ও বেক্সিমকোর ১২ কেজির সিলিন্ডার ১৩১০-১৩২০ টাকা এবং ওরিয়ন, বিএম ও ফ্রেশ কোম্পানির সিলিন্ডার ১২৮০ টাকায় রাখা হয়েছে। রানীরবাজারের এক ব্যবসায়ীকে উচ্চমূল্য আদায়ের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সিলিন্ডারে ২৫ থেকে ৬০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যশোরের স্টেডিয়াম পাড়া এলাকার সেলিম হোসেন বলেন, সরকার এলপিজির দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। সবাইকে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। কার্যকর হতে না পারলে ঘোষণার কী দরকার?

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।

মন্তব্য করুন