• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    এরশাদকে নিয়ে সংসদে বিরূপ মন্তব্যের কারণে হট্টগোল, অচলাবস্থা

    প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় সংসদে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপিরা। এতে সংসদে কিছুক্ষণ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় সংসদের বৈঠক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু নজিরবিহীন ঘটনার সৃষ্টি করে জাপার বেশ কয়েকজন সদস্যকে কথা বলার সুযোগ দেন। এক পর্যায়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার চেম্বার থেকে অধিবেশন কক্ষে ছুটে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
    সোমবার মাগরিবের বিরতির পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা চলাকালে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে জাপা সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
    মোতাহার হোসেন দাবি করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ তার কাছে পরাজিত হন এবং এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে দুই জাপা সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা মাইক্রোফোন ছাড়াই দাঁড়িয়েযান। এরপরও মোতাহার হোসেনের নির্ধারিত ১০ মিনিটের ভাষণ শেষ হয়নি। জাপার দুই সদস্য সংসদ থেকে ওয়াকআউটের হুমকি দিলে ডেপুটি স্পিকার একটু রেগে যান। কার্যপ্রণালী বিধিতে সুযোগ না থাকলেও মোতাহার হোসেনের বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই তিনি দুই জাপা সংসদ সদস্যকে একে একে কথা বলার সুযোগ দেন। মোতাহার হোসেন আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘আমার বক্তব্য শেষ করার আগেই কীভাবে ফ্লোর অন্য একজনকে দেওয়া হচ্ছে।’
    মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের বিরোধিতা করে কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা দাবি করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে এরশাদ আসতে রাজি ছিলেন না। তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সে সময় বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে। এরশাদ বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধ্য হন। কারণ জাপা নির্বাচনে না এলে সরকার থাকবে না। সংসদ নেই। তিনি বলেন, এরশাদ কখনো ভোটে হারেননি। তিনি ৫টি আসনে অংশগ্রহণ করেন এবং জেল থেকেও একাধিকবার জয়ী হন। তাই তার তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।
    একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা চিৎকার শুরু করলে রাঙ্গা তাদের বলেন, চিৎকার করার দরকার নেই। আমরা সংসদ ছেড়ে দেব।’ একপর্যায়ে তার মাইক কেটে দিলে ডেপুটি স্পিকার সদস্যদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেন এবং আপত্তিকর কিছু থাকলে এপপাঞ্চ করা হবে।
    এ পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মোতাহার হোসেনকে আবারও ফ্লোর দেন। এর মধ্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের চেম্বার থেকে তড়িঘড়ি করে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। স্পিকারের আসনে বসে তিনি জাপা সংসদ সদস্যদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে বলেন, ‘আপনারা কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমানের পদে বসে আছেন। ঘরের সাজসজ্জা আছে। এখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখানে একজন বক্তা তার বক্তব্য দিচ্ছেন। উক্ত বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে তা উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু এর জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। তিনি (মোতাহার হোসেন) তার বক্তব্য শেষ করবেন। যখন আমরা অনুভব করি যে আপনাকে সুযোগ দেওয়ার মতো কিছু আছে, আমরা সেই সুযোগ দেব। আপনার কথা শোনা হবে। অ্যাপপাঞ্চের প্রয়োজন এমন কোনো বিষয় থাকলে তা বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার সময় একজন বক্তা যখন বক্তৃতা দিচ্ছেন, সেই বক্তৃতার সময় আপনি যদি হাত তোলেন, ঠিক আছে। কিন্তু তার পর সেই মুহূর্তে পয়েন্ট অব অর্ডার নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হবে না। এটা এক মুহূর্তের মধ্যে ঘটতে পারে. এজেন্ডার মাঝখানে নয়। তাই আপনাদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতা আশা করছি। আপনার বিষয়টিও শোনা হবে।’
    এরপর স্পিকার মোতাহার হোসেনকে তার বক্তব্যের বাকি অংশটুকু করতে বলেন এবং নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে বলেন। মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের পর স্পিকার আবারও ফ্লোর দেন জাপার দুই এমপিকে। তারা একই বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেন এবং মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের (এরশাদের জামিন বাজেয়াপ্ত) অংশে খোঁচা দেওয়ার দাবি জানান। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী রুলিংয়ে বলেন, মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে প্রকৃত ত্রুটি থাকলে তা বিবেচনা করে যাচাই-বাছাই ও এপপাঞ্চ করা হবে।
    ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। বাকি নির্বাচনী এলাকায় ভোট হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন ও নির্বাচনের দিন নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোতাহার হোসেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। লাঙ্গল প্রতীকের এরশাদ ৫ হাজার ৩৮১ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে জামিন হারান। তবে রংপুর-৩ আসনে জয়ী হয়েছেন তিনি।

    মন্তব্য করুন