বিবিধ

এত বরফ কোথায় যায়?

২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারির পর বাংলাদেশে নতুন ওষুধ হিসেবে আলোচনায় আসে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। ওইদিন রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলায় একটি ল্যাব থেকে আট গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন মাদকের সন্ধান শুরু করে।

যদিও প্রাথমিকভাবে দুষ্প্রাপ্য, আইস এখন ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে, তা আটকের পরিমাণ দেখলেই বোঝা যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‌্যাব এবং কোস্টগার্ডের ২০২১ সালের অভিযানে ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম বরফ জব্দ করা হয়েছে। পরের বছর খিঁচুনি তিনগুণেরও বেশি। ২০২২ সালে ১১৩ কেজি ৩৩১ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই পরিমাণ জব্দ করা হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে আরও চালান পৌঁছে যেত। তারা বলেন, যেকোনো জিনিসের চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়ে। আইস ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। আইস একটি খুব শক্তিশালী ওষুধ। অল্প পরিমাণে সেবন করলে আসক্তি হতে পারে। এ কারণে মাদকসেবীরা ইয়াবার দিকে ঝুঁকছে। এ ছাড়া শুরুতে দামও বেশি ছিল। প্রতি কেজি ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা। শুধু মাদকাসক্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা তা নিয়েছে। বর্তমানে এর দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। গ্রামপ্রতি দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এ কারণে অভিজাত পরিবারের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও হাত বাড়াচ্ছে। এটি আরও চালান পেতে শুরু করেছে।

মিয়ানমার থেকে নাফ নদী দিয়ে দেশে আইস ঢুকছে। ইয়াবার চালান দিয়ে এটি আনা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। অবশ্য আইস এর আলাদা চালানও আসছে। সীমান্ত এলাকায় ও দেশের অভ্যন্তরে ইয়াবা ও আইসের রুট প্রায় অভিন্ন। মিয়ানমারের আকিয়াব সীমান্ত দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে করে নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের হবিরছড়া ঘাটে আইস চালান আনা হয়। ঘাট থেকে একটু উপরে একটা গ্রাম। পাহাড় পেরিয়ে গ্রাম। প্রথমে সেই পাহাড়ে আইস লুকিয়ে ছিল। সুযোগ নিয়ে তারা পাহাড়ের পাশে জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করে। পরে তা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

২০২০ সালে, ডিএনসির টেকনাফ স্পেশাল জোনের অভিযানে কক্সবাজারের ইয়াবার রুটে প্রথম আইস এর চালান ধরা পড়ে। এ সময় দুই কেজি আইসসহ আব্দুল্লাহ নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তিনি টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ী রফিকের কাছ থেকে আইস সংগ্রহ করেন। রফিক সরাসরি মিয়ানমার থেকে আইস চালান নিয়ে আসেন। তবে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রফিকের মৃত্যু হয়।

ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল জানান, ইয়াবার নকল বেরিয়ে এসেছে। আইস এখনও নকল করা হয়নি. তাই যাদের কেনার সামর্থ্য আছে তারা ইয়াবা ছেড়ে আয়াসে আসতে ঝুঁকে পড়েছে। তবে মাদকবিরোধী তৎপরতা বাড়ছে এবং আটকও বাড়ছে।

মন্তব্য করুন