• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদারের জীবনাবসান

    একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদার আর নেই। বুধবার (২ আগস্ট) ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।

    তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক জনাব শামসুল ইসলাম। এ ছাড়া সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই হাসপাতালে ছুটে যান।

    আজাদ তালুকদার ১৯৭৮ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম খায়ের আহমেদ তালুকদার, মা মরহুম জাহান আরা বেগম। তার বাবা খায়ের আহমেদ তালুকদার কর্ণফুলী পেপার মিলের সাবেক কর্মকর্তা; তিনি ছিলেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম শিক্ষিত ব্যক্তিদের একজন। ১৯৪৯ সালে রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং পাকিস্তানের করাচির কর্ণফুলী পেপার মিলসে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কিছুদিন চাকরি করেন। এরপর তিনি নিজ এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় সমাজসেবা ও জনহিতকর কাজে যুক্ত হন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় যোগ দেন। তিনি ৫ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে মারা যান।

    আজাদ তালুকদারের মা জাহান আরা বেগম ১৯৭০ সাল থেকে টানা ১৫ বছর পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাহান আরা বেগম জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব নিয়ে নারীর মুক্তি ও নারী অধিকারের কথা বলেন, যখন নারীদের জীবন চারটি জেলে বন্দী ছিল। দেয়াল, যেখানে নারীদের ঘর থেকে বের হওয়াকে ‘অন্যায়’ ও ‘পাপ’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

    প্রসঙ্গত, আজাদ তালুকদার ১৯৯৫ সাল থেকে বন্দর নগরীতে সাংবাদিকতা করছেন। এর আগে তিনি একাতার টিভি, বৈশাখী টিভি, একুশে টিভি এবং আন্তর্জাতিক ফিচার এজেন্সি-সান ফিচার সার্ভিসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। COP-১৭ (ডারবান), COP-১৮ (দোহা), COP-১৯ (ওয়ারশ) কভার করার পাশাপাশি পেশাগত কারণে তিনি ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।

    যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে আজাদ তালুকদার গণমাধ্যমে অনুসন্ধানমূলক তথ্য উপস্থাপন করেছেন। একাত্তর টিভিতে ‘রাজাকারের রোজনামচা’ নামের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের সারথি হয়েছেন তিনি। ২০১৩-১৪ সালে, আজাদ একতার টিভিতে অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্প্রচার ও টকশোতে অংশ নেওয়ার সময় বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন হুমকি ও হামলার শিকার হন।

    আজাদ তালুকদার প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যা ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। করোনার সময়ে যখন সবাই চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত তখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে তারা। বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী ও সাংবাদিক হিসেবে তিনিও জনগণের কাছে তার দায়িত্ব থেকে এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

    ২০০৪ সাল থেকে আজাদ তালুকদার একুশে পত্রিকা সম্পাদনা ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সফলতার সাথে প্রযোজনা ছাড়াও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত রয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত, কিছুদিন আগে তার লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদার বিভিন্ন ব্যয়বহুল পরীক্ষা ও কেমোথেরাপি দিয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নেন।

    সম্পাদক আজাদ তালুকদারের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যাও পরবর্তীতে চিকিৎসায় সহায়তা করেন।

    বুধবার জোহরের নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুম আজাদ তালুকদারের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর কফিন নিয়ে যাওয়া হবে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে। সেখানে দুপুর আড়াইটায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাঙ্গুনিয়া গ্রামের উত্তর পদুয়ায়। বাদ আছর নামাজ ও তৃতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।