রাজনীতি

একরাম চৌধুরীকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সুপারিশ।নোয়াখালী আ.লীগের কোন্দল আরো প্রকট

সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে আহ্বায়ক কমিটি থেকে সরিয়ে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ নিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। নেতারা বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিতে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নোয়াখালী-৪ এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। নোয়াখালীতে দাপুটে এই এমপির অনুসারী নেতাকর্মীরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে একরামুল করিম চৌধুরীর নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে নেই।

এ অবস্থায় সবার একটাই প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন কি একরামুল করিম চৌধুরী? জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, শনিবার দলের জেলা আহ্বায়ক কমিটির বৈঠকে একরামুল করিম চৌধুরীকে আহ্বায়ক কমিটি থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, একরামুল করিম চৌধুরীকে বহিষ্কারের কোনো সুপারিশ এখনো কেন্দ্রে আসেনি। এ ধরনের সুপারিশ পেলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শনিবার জেলা আহ্বায়ক কমিটির বৈঠকে একরামুল করিম চৌধুরী পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র ও তার অনুসারীদের বিদ্রোহী প্রার্থী বানানোর পাশাপাশি ওই প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। তবে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী বৈঠকের আগে একরামুল করিম চৌধুরীকে কোনো নোটিশ বা কারণ দর্শানো হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন বিএসসি।

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল বেশ পুরনো। জেলা আহ্বায়ক কমিটির বৈঠকেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। বৈঠকে একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। আবদুল মমিন বিএসসি বলেন, তিনি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তবে করিম চৌধুরীকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত একরামুল জানেন।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহীন অভিযোগ করেন, একরামুল করিম চৌধুরী ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, ঠিকাদারি, দরপত্রসহ জেলায় আধিপত্য বিস্তার করেছেন। তার মতে, একরামুল করিম চৌধুরীর একচেটিয়া ক্ষমতার কারণে গত এক দশকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কোনো সমাবেশ হয়নি। নিজের পছন্দের লোক দিয়ে পকেট কমিটি করেছেন। সরকারি কোনো বিভাগে চাকরি করতে চাইলে তাকে ১০ শতাংশ অগ্রিম দিতে হয়। কোনো কর্মকর্তা বা ঠিকাদার তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তাকে পুলিশ ও ক্ষুদে বাহিনী দ্বারা হয়রানি করা হয়। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার স্ত্রীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য করে।

শিহাব উদ্দিন শাহীনের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি । কিন্তু রোববার তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর এক বাসিন্দা বলেন, একরামুল করিম চৌধুরীরও গুণ আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তিনি দলকে সুসংগঠিত করেছেন। দলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় বিপথগামী নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ কোনো অপকর্ম করতে পারেনি। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত জেলা আওয়ামী লীগ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই একরামুল করিম চৌধুরী ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগও তোলেন। ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি ওবায়দুল কাদেরকে রাজাকার পরিবারের সন্তান বলেও উল্লেখ করেন।

মন্তব্য করুন