ঋণসহ নানা সংকটে জর্জরিত ব্যবসা-বাণিজ্য
ব্যাংক ঋণ নিয়ে শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। একের পর এক রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট এবং মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়েছেন। একের পর এক কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণের টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ বা আত্মসাৎ করে তাদের ঋণ খেলাপি করেছে। এসব অসাধু ও অদক্ষ ব্যবসায়ীদের কারণে বিপাকে পড়েছেন সৎ ও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ ও দেশে বিনিয়োগ না করা, বিদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের কারণে ব্যাংকগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সৎ ও প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার ও ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। তিন মাস আগে অর্থাৎ গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বা ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। সে অনুযায়ী ৯ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের ভারসাম্য (এনপিএল) বেড়েছে ২২,৪০২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জুন মাসে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা বা ৮৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
তবে ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা স্বস্তি রয়েছে- তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ছাড় দিয়ে পুনঃতফসিল করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এর মাধ্যমে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল করা হবে, সুদ মওকুফ করা হবে এবং ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হবে। তবে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা এ সুযোগ পাবেন না। পুরো প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি স্ক্রুটিনি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, অগ্নিকাণ্ড, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রকৃত ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ২০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণের বিশেষ পুনঃতফসিল করার প্রস্তাব পেশ করবে এই কমিটি। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি নীতিমালা জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে গত বছর থেকে বাংলাদেশকে কঠিন শর্ত মানতে হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনৈতিক প্রভাবে নেওয়া অনেক ঋণই এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিশেষ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। এদিকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এ বিষয়ে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি দেওয়া হয়। আমদানির ঋণের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সুযোগ চাইছে সংগঠনটি। বিটিএমএ চিঠিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সুবিধার্থে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণের মেয়াদ আরও বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। এদিকে ভ্যাট-ট্যাক্স ও গ্যাসের দামে নতুন করে বর্ধিত কউসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
Do Follow: greenbanglaonline24