উভয় সংকটে পুলিশ
সরকার পরিবর্তনের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশের আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি ফিরে আসেনি। অনেক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব নিতে চান না। অনেক পুলিশ সদস্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে অংশ নিতে নারাজ। রাজনৈতিক মামলার তদন্তেও তেমন আগ্রহ নেই। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো ভীত এই বাহিনীর সদস্যরা। ফলে পুলিশের একটি বড় অংশ কোনো না কোনোভাবে চাকরি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এক পুলিশ সদস্য বলেন, পুলিশের দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠ পুলিশের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। কোনো অভিযোগ উঠলেই তাদের বদলি বা সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলার তদন্তে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা কম। তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত চলছে। সে অনুযায়ী মামলার তদন্ত হলেও সমস্যায় পড়তে হয়। স্রোতের জোয়ার নিয়ে তদন্ত চালিয়ে গেলেও ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ এখন উভয় সংকটে রয়েছে। তাই মাঠ পুলিশের একাংশ টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার ওপর প্রভাব পড়ছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের বিভিন্ন থানায় ওসি হিসেবে অন্তত ৭ বছর দায়িত্ব পালন করা একজন পুলিশ পরিদর্শক গতকাল বলেন, চাকরি বহাল থাকলে বেতন পাব। চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে খাব কী? তাই কোনো না কোনোভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমি কোনো ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছি না। পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ এভাবে টিকে আছে বলে জানান তিনি।
গত ২৯শে ডিসেম্বর পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে ঢুকে ‘হুমকি’ দেওয়ার ঘটনায় মাঠ পুলিশের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
দেখা যায়, ময়মনসিংহ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক আশরাফুর রহমান চেয়ারে বসে আছেন। তার সামনে বেশ কয়েকজন আওয়াজ করছে। কেউ উচ্চস্বরে হুমকি দিচ্ছে, কেউ অভিযোগ করছে, কেউ প্রশ্ন করে উত্তর চাইছে। এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা পৌঁছেছে পুলিশ সদর দপ্তরে।
এ সময় ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি আশরাফুর রহমান জানান, সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কয়েকজন জাসদ নেতা তার কক্ষে প্রবেশ করেন।
এভাবে চলতে থাকলে কাজ করা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে। কোনো বিষয়ে যদি পুলিশকে জবাবদিহি করতে হয়, তাহলে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করা কঠিন হবে।
সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা গতকাল বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের বোঝা উচিত তদন্ত স্বাধীনভাবে হতে দেওয়া উচিত। এর জন্য সদিচ্ছা থাকতে হবে। যারা শেষ পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত। পরিবর্তন হোক বা না হোক, আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এখন কর্মকর্তাদের কাজ হবে তাদের অধীনস্থরা যাতে মনোবল হারাতে না পারে তা নিশ্চিত করা। পুলিশ রাষ্ট্রের প্রধান আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পুলিশের মনোবল এখন ভেঙ্গে গেলে তা সমাজের জন্য অকল্পনীয় নয়। সঠিক তদন্ত না হলে কিভাবে ফৌজদারি অপরাধের সঠিক বিচার হবে?
Do Follow: greenbanglaonline24