• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    উপকূলে ‘উন্নয়ন উৎসব’ সুরক্ষায় উদ্যোগ কম

    সাগরপাড়কে ঘিরে চলছে উন্নয়ন উৎসব। কিন্তু উন্নয়ন কাঠামো সুরক্ষার উদ্যোগ খুবই কম। টেকসই বাঁধের অভাবে উপকূল অরক্ষিত থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রতি বছর বাঁধ মেরামতের নামে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করছে। তবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ ছিল না। বন বিভাগ উপকূল রক্ষার জন্য প্যারাফরেস্ট তৈরি করে। উপকূলের দুই-তৃতীয়াংশেও প্যারাবেন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় প্রকল্প নেওয়া হলেও উপকূল রক্ষায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে প্রতিবার ঘূর্ণিঝড় এলে উপকূলের অন্তত দুই কোটি মানুষ আতঙ্কে থাকে।

    ধুঁকছে চট্টগ্রাম উপকূল

    হুমকির মুখে পড়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নগর রক্ষা বাঁধ। নগরীর পতেঙ্গা অংশে স্বাধীনতার ৫২ বছরেও টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরি হয়নি। কিন্তু এই পতেঙ্গাতেই রয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সম্প্রতি ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম টানেল। উপকূল ভাঙলে এই টানেলটিও ঝুঁকির মুখে পড়বে। চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। এই বন্দর দিয়ে বছরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৩.২ লাখ কনটেইনার আসা-যাওয়া করে। এই বন্দরটি ৯০ শতাংশ সামুদ্রিক পণ্য হ্যান্ডেল করে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান কাস্টম হাউসও বন্দরের পাশেই অবস্থিত। শুধু বন্দরকেন্দ্রিক পণ্য চলাচলে সরকার কাস্টম হাউস থেকে প্রতি বছর ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সারা দেশে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য দায়ী। ওই সংস্থার সদর দপ্তরও এখানে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের পাশাপাশি নদীর তীরে আরও দুই ডজন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। চট্টগ্রামের উপকূলে একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডও রয়েছে। সীতাকুণ্ডে নির্মিত এই শিপইয়ার্ড সরকারকে হাজার কোটি টাকা রাজস্বও দেয়। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকা সত্ত্বেও শহরটি চট্টগ্রামে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি।

    মিরসরাইয়ে দুই লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে

    দুই লাখ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে মিরসরাই উপকূলে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম শিল্পনগরী। দেশের প্রথম সমন্বিত গার্মেন্টস-গ্রাম এই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে। স্টিলের জন্য আলাদা হাবও আছে। ৩০ হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে এই শিল্পনগরী, যার বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ও ফেনীর উপকূলীয় এলাকায় গড়ে ওঠা এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরও ২০,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাইপলাইনে রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিও করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এই শিল্পনগরীকে ঘিরেই বিস্তৃত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এটি দেশের বৃহত্তম মেরিন ড্রাইভ যার দৈর্ঘ্য ২৫০ কিলোমিটার। বিশাল এ আয়োজনে থাকবে পাঁচ শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। সাত লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। উপকূল রক্ষা না হলে এই মহাপরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।

    কক্সবাজারের মহেশখালীর ৭২টি প্রকল্পও ঝুঁকিতে রয়েছে

    কক্সবাজারের মহেশখালীকে ঘিরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব, শিল্প এলাকা এবং সমুদ্রবন্দর তৈরির সরকারি উদ্যোগের অংশ এটি। এখানে ৭২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্লান্ট, তেল স্টোরেজ সুবিধা, আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কয়লা, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ডিসচার্জ টার্মিনাল। এখানে ৭২টি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের ২৩টি প্রকল্প, জ্বালানি বিভাগের ছয়টি প্রকল্প, দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৯টি প্রকল্প, সড়ক ও সেতু বিভাগের ৮টি প্রকল্প, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রতিটি প্রকল্প নয়টি। ) এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর, যা নির্মিত হচ্ছে মাতারবাড়িতে। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে সব প্রকল্পই ঝুঁকিতে রয়েছে।

    এ ছাড়া কক্সবাজার শহর, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূলে হাজার হাজার টাকা মূল্যের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোকে ঘিরে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন উপকূলও ঝুঁকিতে রয়েছে।

    হুমকির মুখে বিদ্যুৎ ও এলএনজি সরবরাহ কার্যক্রম

    মাতারবাড়িতে কয়লা, এলএনজিসহ বিভিন্ন জ্বালানির একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে বর্তমানে ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ চলছে। ২০১৩-১৪ সালে পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্প নেওয়া হয়। জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন, তোশিবা কর্পোরেশন এবং আইএইচআই কর্পোরেশনের একটি কনসোর্টিয়াম আগস্ট ২০১৭ সালে তার নির্মাণ ঠিকাদার হিসাবে কাজ শুরু করে।