• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    উত্তর আকাশে সু-সময়

    রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরের সবচেয়ে দূরের জেলা পঞ্চগড়। সড়কপথে ৪৪৩ কিমি। গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চললে পঞ্চগড় যেতেও অর্ধেক দিন লাগে। যানজটের ফাঁদে পড়লে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা! ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা সবই উত্তরাঞ্চলে উন্নতি লাভ করছে। গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সবাই হিমশিম খাচ্ছে, আরো বেশি যাত্রী নিয়ে। গত পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গে যাত্রী সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে।

    উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা এখন রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম এবং নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর দিয়ে আকাশপথে যাতায়াত করতে পারছেন। ক্রমবর্ধমান যাত্রী সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরে আরও বিমানবন্দরের চাহিদা তীব্রভাবে বেড়েছে। দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত বগুড়া ও পাবনা ঈশ্বরদী বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া আশা করছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। আকাশসীমাকে গুরুত্ব দিলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তারা।

    বিমান যাত্রী বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের কাজে দেশ-বিদেশের কর্মকর্তারা এখানে আসছেন। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রেশম কারখানা, একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, চিনিকল, পাঁচ তারকা রিসোর্ট-হোটেল, মেডিকেল ও নার্সিং কলেজ, তেল শোধনাগার, একাধিক কয়লা খনি ও স্থলবন্দর, বড় বেসরকারি কারখানা। দেশের প্রধান লোকোমোটিভ কারখানাও উত্তরবঙ্গে। দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থী ও প্রকৌশলীরা এখানে আসেন। পঞ্চগড়ে সমতল জমিতে চা চাষ হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আরএফএল, প্রাইম সনিক, মিল্ক ভিটা কারখানাও গড়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে।

    জানা গেছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে ঘিরে প্রতিনিয়ত যাত্রীর চাপ বাড়ছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। বর্তমানে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলার ফ্লাইট চলাচল করছে। এছাড়া যাত্রীদের চাহিদার কারণে সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম রুটে ইউএস-বাংলার দুটি এবং সৈয়দপুর-কক্সবাজার রুটে বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইট রয়েছে। এখান থেকে বাংলাদেশ বিমানের রুট আরও সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা চলছে। এদিকে রাজশাহী-কক্সবাজার রুটেও সরাসরি ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নভোএয়ার।

    সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ জানান, প্রতিদিন ৩০টি ফ্লাইট এখানে ল্যান্ড করে। তিনটি এয়ারলাইন্সের প্রায় ২,২০০ যাত্রী রয়েছে। পাঁচ বছর আগেও এ সংখ্যা ৩০০ ছিল না। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যস্ততা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে উল্লেখ করে সুপ্লব বলেন, রংপুর বিভাগের জেলাগুলো ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের অনেক যাত্রী নিয়মিত সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করেন।

    রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভীন জানান, এখানে তিনটি এয়ারলাইন্সও চলাচল করছে। সপ্তাহে চার দিন ১০টি ফ্লাইট এবং অন্য তিন দিন ৭টি ফ্লাইট রয়েছে। সেই হিসাবে, এই বিমানবন্দরে প্রতি সপ্তাহে যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৩০০।

    এদিকে যানজট ও অনিরাপদ ভ্রমণের কারণে অনেকেই রাস্তা এড়িয়ে চলছেন। ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম নিয়মিত আকাশপথে যাতায়াত করতেন। তিনি বলেন, ট্রেনের সময়সূচী বিঘ্নিত হওয়া এবং সময়সূচী না মানার কারণে বিমান চলাচল আরামদায়ক। এছাড়া ট্রেনের এসি সিট  টিকিট সহজে পাওয়া যায় না। আবার ট্রেনের ভাড়া এয়ারলাইন থেকে খুব একটা বেশি নয়, তাই বিমানে ভ্রমণ করাই ভালো।

    সৈয়দপুর শহরের দারুল উলূম এলাকার মেসার্স সায়মা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন মন্ডল মিঠু বলেন, যানজট ও ট্রেন না চলার কারণে বিমান চলাচলের চাহিদা ছিল। তিনি মনে করেন, এ অঞ্চলে আরেকটি বিমানবন্দর থাকলে চাপ কম হতো।

    এদিকে রংপুর-দিনাজপুরের পাশাপাশি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটে শাটল কোচ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।

    রংপুর থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইটের যাত্রী আব্দুল মতিন সরকার বলেন, আমি বাংলাদেশ বিমানে ফ্লাইট করি মূলত এই বাস সার্ভিসের কারণে।

    বাংলাদেশ বিমানের জেলা পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, “আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আগামীতে পর্যায়ক্রমে নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে এ ধরনের সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

    এদিকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সও বিনামূল্যে শাটল কোচ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। ইউএস-বাংলাদেশের স্টেশন ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা আসা-যাওয়া নিয়ে বিব্রত। তাদের সাহায্য নিতে হয় প্রাইভেট বা ভাড়া করা গাড়ির। এটি অতিরিক্ত খরচ এবং ফ্লাইটের সময়সূচী মেনে চলা কঠিন করে তোলে।

    মন্তব্য করুন