উচ্চাভিলাষী বাজেট থেকে সরে আসছে সরকার
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছরে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট প্রণয়ন করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বছরের শেষে বাজেট কমাতে হয়েছিল। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরির পরিকল্পনা করছে। অর্থ বিভাগের মতে, এটি বাস্তবায়নযোগ্য করার লক্ষ্যে এই বাজেট তৈরি করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ববর্তী সরকারের শেষ বছরগুলিতে বাজেট তৈরির প্রক্রিয়াটি মূলত একটি আমলাতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতা ‘ফর্ম পূরণের অনুশীলন’ ছিল। বাজেট ঘাটতি, সামাজিক নিরাপত্তা, রাজস্ব সংগ্রহ পরিকল্পনা এবং প্রকল্পের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ছিল এবং প্রচুর ‘সাধারণ’ বৃত্তাকারতা তৈরি হয়েছিল। গত কয়েক বছরে মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকট এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও, প্রতি বছর বাজেটের আকার বেড়েছে।
৫ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অর্থনীতির জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারল্য সংকট তীব্রতর হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে কিছু
অর্থনৈতিক সূচক কৃত্রিমভাবে স্ফীত করা হয়েছিল, যা বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ সংকটের কারণে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। তাই আসন্ন বাজেটে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বাজেটে কোনও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের খসড়া রূপরেখা উপস্থাপন করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানা গেছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহেদ উদ্দিন মাহমুদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের নেতৃত্বে বাজেট ইউনিটের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত থাকবেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাজেট ব্যবস্থাপনা সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য ৮.৪৮ লক্ষ কোটি টাকার খসড়া বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২.৭০ লক্ষ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাজেটের আকার সামান্য কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ফলে এডিপির আকারও কিছুটা কমানো হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। করের জাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পুনর্বিন্যাস করা হবে। পরবর্তী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে ৫.২১ লক্ষ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে নতুন পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা কিছুটা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫.৪১ লক্ষ কোটি টাকা। তবে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৬,০০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৪,৬৩,৫০০ কোটি টাকা নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (ADP) আকার ২,৭০,০০০ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ADP-র চেয়ে সামান্য বেশি।
Do Follow: greenbanglaonline24