• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ঈদ যাত্রা।অনুপযুক্ত গাড়ি উত্তরের রাস্তায় ভোগাতে পারে

    ঈদে উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে হাজার হাজার আনফিট গাড়ি হাজির। দূরপাল্লার যাত্রী বহনের জন্য এসব অচলবহির্ভূত যানবাহন রং করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে এসব যানবাহনকে সড়ক নির্মাণ সমস্যা না বলে ‘ঘাড়ে কাঁটা’ বলছেন সড়ক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। শুরু থেকেই এই অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা না হলে ঈদে যানজটের কারণে লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। কারণ এখন অনেকেই পাঁচ দিনের ছুটি পাওয়ায় গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

    বগুড়া শহরতলীর ভবেরবাজার, চারমাথায় ‘ভাই ভাই গ্যারেজ’। মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পুরনো গাড়ি রং করে নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে। শরীরের ভাঙা অংশ ঠিক করা। মালিক সোলায়মান আলী জানান, ঈদে তারা যাত্রী পরিবহন করবেন। এ কারণে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি গাড়ি এঁকেছেন এবং বিতরণ করেছেন। তার গ্যারেজের মতো অনেক গ্যারেজই পুরনো গাড়িকে এভাবে নতুন রূপ দিচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা গাড়ি শনাক্ত করার কাজ নই। এটা পুলিশ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের কাজ। তারা তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে দিন। তাহলে মহাসড়কে আর কোনো কষ্ট থাকবে না।

    জানা গেছে, দুর্ভোগ কমাতে সড়ক বিভাগ ২০১৯ সালে এই মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু করে, যা ২০২২ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো বেশ কিছু জায়গায় ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় কাজ শেষ হয়নি। এক লাইনে দুই লেনের যান চলাচল এখনও চলছে। এ ছাড়া গোবিন্দগঞ্জ অংশে নতুন সড়কের কাজ এখনো শুরু হয়নি। সরু সড়কে এক লেনে চলছে যানবাহন। একইভাবে পলাশবাড়ী সেকশনে ফ্লাইওভার নির্মাণের কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত সেখানে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে রংপুর সেকশনে চলাচলকারী সব যানবাহনকে এ সেকশনে যানজটের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন চালক-মালিকরা।

    এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক হামিদুল হক বলেন, এখন দ্রুত কাজ চলছে। ঈদে আমরা বগুড়া সেকশনের চারমাথা ও বারপুর সেকশনে আন্ডারপাস খুলে দেব। ফলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। তবে মহাসড়ক থেকে অযোগ্য অবৈধ যানবাহন কমানো না গেলে যানজট রোধ করা সম্ভব নয়। কারণ এসব গাড়ি সড়কে ভেঙে যানজটের সৃষ্টি করে। গত ঈদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গতবার সড়কে ৫৬টি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুতে ১৮টি গাড়ি ভেঙে পড়ে। এসব গাড়ির বেশির ভাগই রাস্তা চলাচলের উপযোগী নয়। গাড়ি বিকল হয়ে গেলে সামনে-পাশে বড় যানজট হয়।

    এদিকে ঈদ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৪টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা নানা পরিকল্পনা করেছি। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। আশা করছি, ঝুঁকিপূর্ণ অংশে কোনো ঝুঁকি থাকবে না। এ ছাড়া অবৈধ যানবাহন চলাচলেও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে। একইভাবে উত্তরবঙ্গ, রাজশাহী ও পাবনার দিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

    বাস চালকরা বলছেন, এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়কটি চার লেন হওয়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নে আসতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। আবার সেতুটি দুই লেনের। ফলে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনে আসা যানবাহনগুলো এখানে ধীরগতিতে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। এখান থেকেই শুরু হয় যানজট। বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করে। ঈদের আগে তা বেড়ে হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার। গতবার ঈদযাত্রায় একদিনে ৫৪ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে দুই লেনের সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

    হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি। অবৈধ যানবাহন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন যাতে রাস্তায় না চলে সেদিকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি, এবার কোনো সমস্যা হবে না।

    এদিকে ঈদে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার বগুড়ার চান্দাইকোনা বাজার, শেরপুর ও শাজাহানপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন বগুড়ার প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ঈদের সাত দিন আগে ও সাত দিন পর মহাসড়কে অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার চলাচল করবে না। মহাসড়কের বিভিন্ন ওভারপাস পয়েন্ট খুলে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়র, পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    মন্তব্য করুন