জাতীয়

ঈদে রাজনীতি।এলাকায় নেতাকর্মীরা নির্বাচন ও আন্দোলনের পরিবেশ

জাতীয় নির্বাচন আর মাত্র আট মাস বাকি। নির্বাচনের আগে আরেকটি ঈদ থাকলেও এবারও জমে উঠেছে ঈদের রাজনীতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় ছুটছেন রাজনীতিকরা। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা এখন আঞ্চলিকমুখী। বিগত ঈদে এলাকায় না গেলেও এবারের ঈদুল ফিতরের চিত্র ভিন্ন। গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ করছে ক্ষমতাসীন দল। আর সরকারবিরোধীরা চলছে চূড়ান্ত আন্দোলনের বার্তা দিয়ে। এ অবস্থায় এবারের ঈদে সারাদেশে নির্বাচনী ও আন্দোলনের পরিবেশ বইছে।

ঈদুল ফিতরে ক্ষমতাসীন দলের অধিকাংশ নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এলাকায় থাকবেন বলে জানা গেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতারাও এলাকায় আগাম দৌড়ঝাঁপ করছেন। ঈদের ছুটিতে তারা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী মাঠ তৈরিতে তৎপর থাকবেন। তবে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারা অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে যাকাত ও ফিতরা প্রদান করছে; সাধ্যমতো দান-খয়রাতও করতেন। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদ উপহারও বিতরণ করছেন। আর ঈদের ছুটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিপদ সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের জন্য সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা করবেন তারা।

অন্যদিকে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ঈদের ছুটি কাজে লাগাতে চান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বহুমুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কেন্দ্রের নির্দেশনা পৌঁছে দেবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় নিজেদের অবস্থানও জানাচ্ছেন এসব নেতা। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-এমপি, বিগত নির্বাচনের প্রার্থীসহ সম্ভাব্য নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকাই প্রকৃত রাজনীতিকের লক্ষ্য। আর ঈদ বা অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান মানুষের সঙ্গে থাকার দারুণ সুযোগ নিয়ে আসে। এ কারণে প্রতিবারের মতো এবারও তারা মানুষের পাশে থেকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবেন। এছাড়াও যতটা সম্ভব মানুষকে সাহায্য করুন।

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নেই। অর্থনৈতিক অবস্থাও নাজুক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটে মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থায় মানুষের ঈদের আনন্দ নেই। ঈদ উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাধ্য অনুযায়ী; সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়. অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাবেন তারা। তিনি আশা করেন, এবার জনগণ জেগে উঠবে।

দলটির নেতারা বলছেন, ঈদুল ফিতরের ছুটি তাদের আগামী নির্বাচনের আগে এলাকায় গণসংযোগ বৃদ্ধি ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর দারুণ সুযোগ করে দিয়েছে। এ উপলক্ষ্যে তারা তাদের নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে কাজ করবেন। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির নামে বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হবে। তারা ঈদ উৎসবকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনী মাঠ নিজেদের অনুকূলে রাখার কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাই এবার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। অনেকে ঢাকায় ঈদ উদযাপন করলেও এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ঈদে ঢাকায় থাকবেন। তবে এরই মধ্যে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠিতে গিয়ে এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তিনি দুস্থদের মাঝে ঈদ উপহারও বিতরণ করেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এখন পাঁচ দিনের সফরে তার নির্বাচনী এলাকা ভোলা সদরে অবস্থান করছেন। পুরো ঈদের ছুটিতে এলাকার জনগণের সঙ্গে গণসংযোগ, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দুঃস্থ মানুষের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ এবং সভা-সমাবেশে যোগ দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাবেন প্রবীণ এই নেতা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকায় ঈদের নামাজের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর তিনি তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতেও যেতে পারেন।

মন্তব্য করুন