• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ঈদকে সামনে রেখে চক্রটি সক্রিয় রয়েছে।ভাঙতি গ্রুপের সদস্যরা জাল টাকা ছড়াচ্ছে

    করোনার কারণে গত দুই বছরে ঈদ উৎসবে টাকার লেনদেন কম ছিল। তবে এবারের ঈদের বাজার ইতিমধ্যেই জমজমাট। এতে নগদ লেনদেনও বেড়েছে। সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকা তৈরি চক্রের সদস্যরা। কমিশনের বিনিময়ে ‘ভাঙতিগ্রুপ’-এর সদস্যদের মাধ্যমে সারা দেশে জাল নোট ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সারা বছরই জাল মুদ্রা চক্রের সদস্যরা জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করে। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে এসব চক্র আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে এ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকেই নজরদারিতে রয়েছেন।

    গত মঙ্গলবার রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের জাল নোটসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে গত জানুয়ারিতে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২ লাখ টাকার জাল নোটসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব।

    ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার লালবাগ এলাকার একটি বাড়িতে জাল নোট তৈরির কারখানা পাওয়া গেছে। সেখান থেকে জব্দ করা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকার জাল নোট এবং ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা সহ জাল মুদ্রা। কারখানার মালিক তাইজুল ইসলাম লিটন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ঈদকে সামনে রেখে সে দিনরাত জাল নোট তৈরি করে আসছিল। এরই মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। লিটন বলেন, তার কারখানায় মাসে কোটি কোটি টাকা জাল নোট তৈরি করতে পারে।

    ডিবি কর্মকর্তা আরও জানান, লিটন ছাড়াও জাল নোট তৈরির সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি চক্র জড়িত ছিল। তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে।

    ডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রের কোনো তালিকা না থাকলেও বিভিন্ন গ্রেপ্তারের পর অন্তত ১৪টি গ্রুপ জাল নোট তৈরিতে সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব চক্র বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হলেও জেল থেকে বেরিয়ে আবারও খুলেছে জাল টাকা তৈরির কারখানা।

    বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া জাল নোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তিন ধাপে বাজারে জাল নোট বিতরণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হল কারিগর বা মেশিনম্যান। নকলকারীরা ‘মিন্ট মালিক’ নামে পরিচিত। দ্বিতীয় ধাপ ডিলার. এসব ডিলারের অবস্থান বিভিন্ন জেলা, বিভাগীয় এলাকা ও সীমান্ত এলাকায়। তারা ‘টাকশাল’ মালিকদের কাছ থেকে জাল নোট কেনে। তৃতীয় পর্যায় ও মাঠ পর্যায়ে রয়েছে শতাধিক খুচরা প্রতিনিধি। জাল নোট চক্রের অপরাধ জগতে তারা ‘ভাঙ্গাটি গ্রুপ’ নামে পরিচিত। এই ধাপের সদস্যরা কমিশনের বিনিময়ে দোকানে পণ্য ক্রয় করে এবং এসব জাল নোট সক্রিয় রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, উৎপাদকরা সাধারণত ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার এক লাখ টাকার জাল নোট ডিলারদের হাতে তুলে দেন। ডিলার ভাঙতি গ্রুপের কাছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ভান্টি গ্রুপ বা খুচরা বিক্রেতারা শহরের ব্যস্ততম এলাকায় রেস্টুরেন্ট, খাদ্য সামগ্রী, প্রসাধনী, টেক্সটাইল সহ বিভিন্ন পণ্য কেনার সময় আসল নোটের ভিতরে জাল নোট ঢুকিয়ে দেয়।

    চক্রের সদস্যরা এতগুলো জাল নোট বাজারে এনেছেএমন প্রশ্নে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রযুক্তির কারণে জাল নোট প্রস্তুতকারীরা প্রায় হুবহু আসল নোট তৈরি করছে। সাধারণ মানুষ, যখন তারা নতুন বা বড় মূল্যের নোট পান, তখন দেখে নিন কোন ধার বা নিরাপত্তা থ্রেড বা ওয়াটারমার্ক আছে কিনা। কিন্তু আসল নোট সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থাকায় যাচাইকরণ সবসময় সঠিক হয় না। তা ছাড়া, অনেক আসল নোটের ভিতরে দেওয়া জাল নোট যাচাই করার সুযোগ সবসময় থাকে না। বৃত্তের সদস্যরা এই পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে। জাল নোট শনাক্ত হলে সাধারণ মানুষ আইনি ঝামেলা এড়াতে তা প্রকাশ না করেই তা ধ্বংস করে দেয়। এ কারণে বাজারে জাল নোট থাকলেও ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।

    মন্তব্য করুন